নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪২ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর পর কেটে গেছে চার দিন। জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভারত সরকারের তরফে পালটা প্রত্যাঘাত কী হতে চলেছে তা হয়তো সময় বলবে। কিন্তু এর মাঝেই শহীদ জওয়নাদের মৃত্যুর পাল্টা প্রতিশোধ নিতে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি নিকেশ অভিযান শুরু করে দিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। রবিবার রাতে সেনাবাহিনীর কাছে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর আসে পুলওয়ামা জেলার পিংলান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে কয়েকজন জঈশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি। সেইমতো রবিবার গভীর রাতেই সেনাবাহিনীর একটি দল ওই এলাকায় হানা দেয়। এলাকায় পৌঁছাতেই শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে তুমুল গুলির লড়াই। রাতভর গুলির লড়াইয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াইয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ৪ জন সেনার শহীদ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে মৃত দুই জঙ্গি গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফ কনভয়ে হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। একদিকে মাতৃভূমি থেকে জঙ্গি নির্মূল করতে যখন প্রত্যেক দিন নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছেন ভারতীয় সেনা জওয়ানরা তখন শহীদ সিআরপিএফ জওয়ানদের বেদির সামনে দেশকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার শপথ নিলেন দুর্গাপুরের বহু ক্যারাটে অনুশীলনকারী। রবিবার রাতে দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারে জংশন মল এলাকায় পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ানদের আত্মার শান্তি কামনায় এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। দুর্গাপুরের জংশন মল এলাকাতেই বহুদিন ধরে বহু ছাত্র-ছাত্রীকে নিজেদের আত্ম-রক্ষার্থে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ সেই প্রশিক্ষণের শেষেই আয়োজন করা হয়েছিল স্মরণ সভার। ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্য, দেশে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাতে জঙ্গিরা যদি মানব বোমা হয়ে হত্যালীলা চালাতে পারে, তাহলে ১৩০ কোটির দেশ ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে থেকে তারাও মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য মানব বোমা হতে প্রস্তুত। ক্যারাটের মধ্যে দিয়েই দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে জঙ্গি নিধন যজ্ঞে নিজেদের জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত জগন্নাথ গড়াই, প্রিয়াঙ্কা পালিত, নিতাই গোস্বামীর মতো ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের প্রশিক্ষকের কথায়, দেশ রক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনী যেমন শত্রুদের মোকাবিলা করতে সবসময় প্রস্তুত, তেমনি ভারতীয় হিসেবে আমরা প্রত্যেকে শত্রু নিধনের জন্য নিজেদের জীবন বলিদান দিতে সদা প্রস্তুত। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ভারতীয় সেনার সাহায্যার্থে আমরা সবাই শত্রু নিধন যজ্ঞে শত্রুপক্ষের দেশে এক দেশাত্ববোধ ভারতীয় হিসেবে লড়াই করতে প্রস্তুত। আমরা ক্যারাটে যারা শিখি, তারা শুধু নিজেদের আত্মরক্ষার জন্যই শিখি, কাউকে আঘাত করার জন্য নয়। কিন্তু কেউ যদি ভেবে থাকে আমাদের এই ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশের ক্ষতি করতে পারে তবে তারা জেনে রাখুক, ভারতবর্ষে এখনও এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা চোখের নিমেষের মধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া অনুশীলনকে পাথেয় করে বড়সড় আঘাত হানতে পারে শত্রুপক্ষকে। আজ আমরা সেই শপথই নিলাম-জানালেন ক্যারাটে প্রশিক্ষক সারদা বাবু। এইদিন সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের জংশন মলে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আট থেকে আশি সকল বয়সেরই মানুষ একত্রিত হয়ে ভারতীয় জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে গেল সমস্ত জংশন মল প্রাঙ্গণ।