নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান; – মাত্রই ৪৮ ঘণ্টার ফারাক। সোমবারই বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রশাসনিক সভা করতে এসে সিভিক ভলেণ্টিয়ারদের মাধ্যমে টাকা তোলা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি রাজ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সুরজিত কর পুরকায়স্থকেও জিজ্ঞাসা করেন, সুরজিত তোমরা টাকা নাও নাকি? মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রশাসনিক সভাতেই জানান, সিভিক ভলেণ্টিয়ারদের মাধ্যমে বিভিন্ন থানার ওসি টাকা তুলছে। তার কাছে অভিযোগ আসছে। তিনি বলেন, অনেকে নাকি বলছেন কলকাতায় টাকা পাঠাতে হয়। দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, কাকে টাকা পাঠাতে হয়। দল চালাতে তাঁরা কোনো টাকা নেন না। এরপরই তিনি সুরজিত পুরকায়স্থকে জিজ্ঞাসা করেন, সুরজিত তোমরা টাকা নাও নাকি? বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে ঘিরে যখন চর্চা শুরু হয়েছে। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর সভা সেরে যাবার ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সিভিক ভলেণ্টিয়ারকে চাকরি পাইয়ে দেবার নাম করে পুলিশের হাতেই ধরা পড়ল এক কনষ্টেবল। বিহারের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে ওই কনষ্টেবল বর্ধমানের কেশবগঞ্জ চটি এলাকায় বসবাস করছেন। পুলিশ সুপারের স্বাক্ষর ও সিলমোহর জাল করে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের ভুয়ো নিয়োগপত্র দেবার অভিযোগে ওই কনস্টেবল সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করল বর্ধমান সদর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম হরেন্দ্র পাণ্ডে এবং গোপাল সিংহ। এর মধ্যে কনষ্টেবল হরেন্দ্র পাণ্ডে বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত। বৃহস্পতিবার ধৃত ২জনকে বর্ধমান আদালতে তুলে পুলিশী হেফাজতে নেবার আবেদন জানানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানার জিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা অমর হাজরার কাছ থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ পাইয়ে দেবার নাম করে তিন দফায় মোট ৫০ হাজার টাকা নেয় ধৃত কনস্টেবল ও তার সাগরেদ। টাকার বিনিময়ে তাকে দেওয়া হয় এসপির সই করা জাল নিয়োগপত্র। সেই অনুযায়ী তাকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ডিউটিও করানো হয় বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন কাজ করার পরও কোনো বেতন না মেলায় সন্দেহ হওয়ায় অমর হাজরা ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর তখনই অমরবাবু জানতে পারেন তার নিয়োগপত্রটিই সম্পূর্ণ জাল। এরপরই তিনি বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার বর্ধমান সদর থানার পুলিশ অভিযুক্ত কনস্টেবল ও তার সাগরেদকে গ্রেপ্তার করে। জেলা পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ধৃতদের পুলিশী হেফাজতে নেবার আবেদন জানানো হয়েছে। এভাবে সিভিক ভলেণ্টিয়ারের চাকরী দেবার নাম করে আর কারও ক্ষেত্রে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় শহর জুড়েই তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।