সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- আজ ৭৫ বছর হয়ে গেল আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। বহু মানুষের আত্মত্যাগে এসেছে এই স্বাধীনতা। বিশেষত প্রথম সারিতে থেকে তৎকালীন ইংরেজ সরকারের সঙ্গে লড়াই করে, দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বহু বিপ্লবী। যেই সব বিপ্লবীদের অধিকাংশ এই বাংলার আনাচে কানাতে আত্মগোপন করে থেকে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। সেই রকমই বিপ্লবীদের একটি ডেরা ছিল কোতুলপুরের বিবেকানন্দ আশ্রম। যেখানে স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন বিপ্লবীদের গুপ্ত মন্ত্র শেখাতে।
সালটা সম্ভবত ১৯৩৫ কিংবা ৩৮। সেই সময় কোতুলপুরের বিবেকানন্দ আশ্রমের সাধনভজনকে সামনে রেখে তৎকালীন বৈপ্লবিকরা ডেরা গড়ে তুলেছিল। এখানে বিপ্লবীরা আগ্নেয়াস্ত্র , লাঠিখেলা, কুস্তি লড়াই, বোম বাঁধা, অস্ত্র নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ নিতেন। এমনকি আত্মরক্ষারও কৌশল শেখানো হতো । প্রথম সারির বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন চারুবালা। যাকে এলাকার মানুষ সকলে মা পিসি বলে ডাকতেন। কোতুলপুরে বিপ্লবীদের মধ্যে যাদের নাম না বললেই নয় সেই সকল বৈপ্লবীরা হলেন ধীরেন্দ্রনাথ কর্মকার, মন্মত মল্লিক, চারুবালা মুখার্জি, রাখাল চন্দ্র নাগ, শীতল চন্দ্র ভদ্র, গোবিন্দচন্দ্র দত্ত। ১৮৮০ সালে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এখানে দুর্গাপুজোর সপ্তমীতে আরতিও দেখেছিলেন।
আশ্রমের ঘন্টার আওয়াজ এবং শঙ্খের আওয়াজ শুনে বিপ্লবীরা গোপন ডেরা থেকে খাবার খেতে বেরিয়ে আসতেন। আবারও কখনো ইংরেজ পুলিশ এসে পড়লে শঙ্খের আওয়াজ এবং ঘন্টার আওয়াজ দিয়ে গোপন ডেরাতে ঢোকার বার্তা দেওয়া হত। সেই সময় স্থানীয় মহিলারাও বিপ্লবীদের নানাভাবে সাহায্য় করেছিলেন। নিয়মিত খাবার সরবরাহের পাশাপাশি নিজেদের স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ দিয়ে স্বাধীনতার লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন তাঁরা।
আজও স্বমহিমায় বিরাজমান কোতুলপুরের সেই বিবেকানন্দ আশ্রম। যে আশ্রম আসলে বৈপ্লবিক কাজকর্মের জন্যেই মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে আজ সেখানে চলে নিত্য পূজা। এই আশ্রমকে ঘিরে স্বাধীনতার সেই সব দিনের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের স্মৃতি আজও জীবন্ত হয়ে ওঠে এলাকার প্রবীণদের মাধ্যমে।