eaibanglai
Homeএই বাংলায়বাঁকুড়ার শীট পরিবারের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর ইতিহাস যেন রূপকথা

বাঁকুড়ার শীট পরিবারের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর ইতিহাস যেন রূপকথা

সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ– বাঁকুড়ার দু’নম্বর ব্লকের কষ্টিয়া গ্রামের শীট পরিবারের ৩৫০ বছরের পুরনো দুর্গাপুজোর ইতিহাস যেন গল্পকথা। যেখানে এক মেষপালক মায়ের সপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করে জমিদার হয়ে যান। যে ইতিহাস রূপকথাকেও হার মানায়।

কষ্টিয়া গ্রামে ঢুকতেই দেখা মিলবে দু-পাশে সবুজ ধানক্ষেত। মাঝখান দিয়ে এঁকে বেঁকে কাঁচা রাস্তা চলে গিয়েছে, যে রাস্তা সোজা কষ্টিয়া গ্রামে প্রবেশ করে। এই গ্রামেই বাস এক সমেয়ের জমিদার শীট পরিবারের। বর্তমানে জমিদারি না থাকলেও রয়ে গেছে সেই বাড়ি ঘর আর ঐতিহ্য। যেখানে আজও প্রথা ও সংস্করার মেনে পালিত হয় প্রচীন ঐতিহ্যবাহী ৩৫০ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো। বংশ পরম্পরায় আজও সুপ্রাচীন এই ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছেন শীট পরিবারের সদস্যরা।

এই শীট পরিবারের পূর্বপুরুষ যিনি প্রথম দুর্গা আধারনা শুরু করেন সেই সার্থক শীট প্রথম জীবনে ছিলেন মেষপালক। এক সময়ে মেষ চড়াতে বেলিয়াতোড় থেকে এই কষ্টিয়া গ্রামে উপস্থিত হন তিনি। কথিত আছে সেখানে একদা তিনি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন একটি বট গাছের তলায় এবং মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশে দেবী তাঁকে ওই গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে আরাধনা করার নির্দেশ দেন। সেই মতো একটি চালা করে মা দুর্গার পুজো শুরু করেন সার্থক শীট। ব্যাস তারপরই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। ক্রমে বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠেন এই সার্থক। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একের পর এক জমিদারি ক্রয় করে মালিক হয়ে ওঠেন কয়েক হাজার হেক্টর বনভূমির।

সার্থক শীটের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তিনি আড়ম্বর করে চালু করেন মা দুর্গার পুজো, প্রতিষ্ঠিত হয় বিশাল নাটমন্দির। শীট পরিবারের পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট ছিল বিশেষ যাত্রাপালা। যে যাত্রাপালা আর পাঁচটা পালার মতো রাতের বদলে দিনে অনুষ্ঠিত হতো। কারণ বনে জঙ্গলে বেষ্টিত এই কষ্টিয়া গ্রামে বুনো হাতির উপদ্রব প্রায়শই লেগে থাকত। তাই বিভিন্ন গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে আসা প্রজারা যাতে দিনের আলো থাকতে বাড়ি ফিরে যেতে পারে তার জন্যই ছিল এই বিশেষ ব্যবস্থা। এখন যাত্রাপালা বন্ধ হয়ে গেলেও বিজয়ার দিনে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বর্তমানে আর জমিদারির জাঁকজমক নেই। তাই পুজোর জৌলুসও হারিয়েছে অনেকটা। তবে পুজোর রীতি রেওয়জাও ঐতিহ্য ও আন্তরিকতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। এখনও পুরনো রীতি মেনেই হয় পুজো। শুধু শীট পরিবারের সদস্যরাই নয় রুজির টানে গ্রামের যে সমস্ত মানুষ বাইরে থাকেন পুজোর কটা দিন এই শীট বাড়ির পুজোর টানে তারাও গ্রামে ফেরেন ও পুজোর চারটে দিন আনন্দে মেতে উঠেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments