বিশেষ সংবাদদাতা, বর্ধমান : খুন হয়ে যাওয়া কয়লা মাফিয়ার স্ত্রীকে এবার আদালতে হাজির করালো বর্ধমান পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী সিট, যা রাজু ঝা খুনের মামলায় নিয়ে এল নাটকীয় মোড়।
বৃহস্পতিবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে নিহত রাজুর স্ত্রী রঞ্জু ঝা-কে হাজির করায় পুলিশ। সিটের তদন্তকারী অফিসার সিজেএমের কাছে মৃতের স্ত্রীর গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করানোর জন্য আবেদন জানান। সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর আদালতের ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মৃতের স্ত্রীর গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করানোও হয়। এর আগে পুলিশ দূর্গাপুরে রাজুর বিধাননগরের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদও করে। তার কাছ থেকে বেশকিছু তথ্য পাওয়ার পর তদন্তকারীরা রঞ্জুর জবানবন্দী নথিভুক্ত করার কথা ভাবেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজুকে খুনের পিছনে কি কারণ থাকতে পারে তা রঞ্জুর কাছ থেকে জানতে চান তদন্তকারীরা। পুলিশকে রঞ্জু বেশকিছু তথ্যও দেন। তার বয়ান প্রথমে নথিভুক্ত করে পুলিশ, তারপরই আইনসিদ্ধ প্রথায় ওই বয়ান নথিকরণের কথা ভাবা হয়। এরপরই এদিন সকালে রাজুর স্ত্রী তদন্তকারীদের কাছে গিয়ে – তিনি গোপন জবানবন্দি দিতে চান বলে জানান। তারপরই দ্রুততার সঙ্গে তার বয়ান নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা করে জেলা পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া মৃতের স্ত্রীর বয়ান ঘটনার কিনারায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন সিটের তদন্তকারীরা।
এদিকে, ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে ধৃত ইন্দ্রজিৎ গিরি ও লালবাবু কুমারকে এদিন সিজেএম আদালতে ফের পেশ করা হয়। তাদের হেফাজতে নিতে চেয়ে এদিন অবশ্য নতুন করে আর আবেদন জানায়নি পুলিশ। ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বর্ধমান কোর্টের সিজেএম। পুলিস এদিন আদালতে দাবি করেছে, হেফাজতে থাকাকালীন ইন্দ্রজিৎ ও লালবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশকিছু তথ্য মিলেছে। রাজু খুনে সুপারি কিলারদের ব্যবহৃত দু’টি গাড়ি তারা দিল্লি থেকে নিয়ে এসেছিল বলে সিটের দাবি। দুর্গাপুর থেকে যে নীল গাড়িতে চেপে শার্প-শ্যুটাররা শক্তিগড়ে এসেছিল সেটি তারাই জোগাড় করে দিয়েছিল। খুনের পর যে সাদা গাড়িতে চেপে শ্যুটাররা পালিয়েছিল সেটিও তাদের এনে দেওয়া বলে লালবাবু ও ইন্দ্রজিৎ জেরায় কবুল করেছে, বলে সিটের দাবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও দু’জনের নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাদের মধ্যে একজন খুনের এক মাস্টারমাইন্ডকে বেশ কয়েকবার টাকা পাঠায় বলে ইন্দ্রজিৎ ও লালবাবু তদন্তকারীদের কাছে স্বীকার করেছে। তাদের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী সেই দু’জনের ছবি সিআইডির বিশেষজ্ঞদের দিয়ে আঁকানো হয়েছে। লালবাবু ও ইন্দ্রজিৎ এর আগে কয়েকবার বর্ধমানে এসেছে। তারা বর্ধমান শহরের তিনকোনিয়া এলাকার একটি হোটেলে এসে থাকত। সেই হোটেলের রেজিস্টারটি বাজেয়াপ্ত করেছে সিট। রাজু খুনে জড়িতরা কলিং অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলত। রাজু খূনের ঘটনার কিনারা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। খুনি এবং পরিকল্পনাকারীরা সাইবার বিষয়ে অত্যন্ত পটু, বলে সাইবার বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পেরেছেন। সে কারণে রাজু খুনের মামলায় সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়কে এখন বিশেষ আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। এখন থেকে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সরকারের হয়ে মামলা লড়বেন।