নিউজ ডেস্ক এই বাংলায়ঃ অবশেষে লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর প্রথম পদক্ষেপ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যে গেরুয়া বাহিনীর কাছে পর্যুদস্ত দলের আগামী রণকৌশল কী হতে চলেছে, কোন কেন্দ্রে দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন এই সমস্ত কিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণেই আজ কালীঘাটে জেলার বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা মূলত আঁচ করাই গিয়েছিল লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরেই, শুধু অপেক্ষা ছিল সময়ের। গতকাল এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালে আসানসোল ও দুর্গাপুর-বর্ধমান দুই লোকসভা কেন্দ্রে শাসকদলের হেভিওয়েট নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের ঘটনা সামনে আনা হয়েছিল। খোদ দুর্গাপুর কেন্দ্রে দলীয় অন্তর্ঘাতের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা। তবে শুধু আসানসোল, দুর্গাপুর কেন্দ্র নয়, এরকম রাজ্যের বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের জয়ী ও পরাজিত প্রার্থী ও নেতা-মন্ত্রীদের নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের এই বৈঠক। স্বভাবতই বৈঠকে ঠিক কী ধরণের দাওয়াই পড়তে চলেছে তা সহজেই অনুমেয়। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নিয়েই আপাতত রাজ্যবাসীর কৌতূহল, তা হল তাহলে কী এই বৈঠকেই ডানা ছাঁটা হতে পারে একাধিক নেতা-মন্ত্রীর? আর তাই যদি হয় তাহলে কোন মন্ত্রীর ডানায় কোপ পড়তে চলেছে। এই নিয়েই চলছে আপাতত জোর জল্পনা। তবে একদিকে কালীঘাটে যখন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে লোকসভা ভোটের কাঁটাছেঁড়া চলছে তখন ভোট পরবর্তী অশান্তির জেরে দফায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। কোথাও ভাঙচুর, কোথাও গুলিবিদ্ধ আবার কোথাও দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে দফায় দফায় উত্তপ্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলা। তবে সবথেকে উত্তপ্ত বাঁকুড়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাঁকুড়ার তালডাংরা থানা এলাকার ঘটনা। সেখানে পাঁচমুড়া তৃনমূল আই এন টি টি ইউ সি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির দিকে। পাঁচমুড়া অঞ্চল সভাপতি উত্তম গরাই এর অভিযোগ, সিপিএম থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিজেপি কর্মি সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপির তালডাংরা মন্ডল দুই এর বিজেপি সভাপতি সুজয় দুলে তৃনমূলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে তালডাংরা এলাকারই কুলবনী গ্রামে বাঁকুড়া জেলাপরিষদের বনভূমি দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ চন্দনা অধিকারীর বাড়িতে গভীর রাতে হামলা চালালো দুস্কৃতিরা। চন্দনা অধিকারী জানান, শুক্রবার গভীর রাতে ৩০-৪০ জনের একটি দুষ্কৃতিদল বাড়ির দরজা ভেঙে ঘরের ভিতর ঢুকে ফ্রিজ, আলমারি, দোকানঘর, দরজা সব ভাঙচুর করে। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অকথ্য গালিগালাজ ও তান্ডবলীলা চলে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, চন্দনা দেবীর শিশু কন্যার গলা থেকে সোনার চেন ছিনতাই করার পাশপাশি তাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতিদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, ২৩শে মে-র পর থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত বাঁকুড়া। শুক্রবার রাতেই এক বিজেপি কর্মীর গুলবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার রাতে বিজেপি সমর্থকরা বাজি ফাটানো শুরু করলে তৃণমূলের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা জয়ের উল্লাসে বাজি ফাটানো শুরু করলে শালতোড়া ব্লকের তৃণমূল ব্লক সভাপতি কালিপদ রায় ও তার অনুগামীরা বিজেপি মহিলা কর্মীদের উপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এই অভিযোগে বিজেপির কর্মী ও সমর্থকরা শালতোড়া থানায় জমায়েত হলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা পুলিশের উপস্থিতিতেই বিজেপি কর্মীদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনেই আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালালে বিদ্যুৎ দাস নামে এক বিজেপি কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ। ঘটনায় পুলিশ নিষ্ক্রিয়তার অভিজগ্ন তুলেছে বিজেপি। তবে শুধু বাঁকুড়া নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে অশান্তির খবর আসছে। কোথাও তৃণমূল আবার কোথাও বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে হামলার।