eaibanglai
Homeএই বাংলায়'বারেক ফিরে চাও'- কলেজ ছাত্রের অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ

‘বারেক ফিরে চাও’- কলেজ ছাত্রের অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- বর্তমানে অপ্রয়োজনে নিজের অল্প বয়সী সন্তানদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেওয়াটা স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে উঠেছে। ইণ্টারনেট সস্তা হওয়ার দৌলতে বর্তমান প্রজন্মের একটা বড় অংশ সদর্থক ব্যবহারের পরিবর্তে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বেশি করছে। সমাজে ঘটে চলেছে বিভিন্ন অসামাজিক কাজ। মাঝে মাঝে সংবাদ মাধ্যমের পাতায় তার বেশ কিছু নমুনা পাওয়া যাচ্ছে। তার মাঝেও কিছু ব্যতিক্রম চরিত্র দেখা যাচ্ছে। তাদের অন্যতম হলো গুসকরা শহরের মণিপুষ্পক খাঁ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র।

কাব্যচর্চার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পীঠস্থান হলো এই বাংলা। এখান থেকেই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ সুকান্তদের মত বিখ্যাত কবিরা উঠে এসেছেন। একটা সময় বিকাল হতে না হতেই ঘরে ঘরে বসে যেত কাব্যচর্চার আসর। সেইসব আজ অনেকটা অতীত হলেও লকডাউনের সময় থেকে অল্প অল্প করে আবার সাহিত্যচর্চা শুরু হয়েছে। তারই ফলশ্রুতি ৬০ টি ভিন্ন স্বাদের কবিতা সমৃদ্ধ মণিপুষ্পকের একক কাব্যগ্রন্থ ‘বারেক ফিরে চাও’ ।

তরুণ রোমান্টিক কবিদের জীবনে সর্বদাই বিরাজ করে বসন্ত – যেন ওদের মন ‘চিরবসন্তের দেশ কুইটো’। তাইতো তার কাব্যগ্রন্থে প্রেমের কবিতা মুখ্য হয়ে উঠেছে।
‘ইচ্ছেরা ছুটিতে আছে’ ঠিকই অথবা ‘দীপা আজ অন্যের বালিশে’ থাকলেও ‘নিয়ম করে বসন্ত এসেছে’। ‘জন্ম-মৃত্যু দিয়ে বাস্তব ঢাকা যায়না’ বলেই ‘তিতাস এক নদীর নাম, সবাই তা মানে’। এভাবেই একের পর এক কবিতায় ধরা পড়ে তার কাহিনী।

তবে প্রেমের পথে কখনোই গোলাপ ছড়ানো থাকেনা। ফলে প্রেমের হাত ধরে শোনা যায় বিরহের গান। আকুল কণ্ঠে শোনা যায় কবির ব্যাকুল হৃদয়ের ডাক – ‘আবারো একটা বসন্ত আসছে প্রিয়তমা……. প্রিয়তমা তুমি আসছো তো’। পৃথিবীর সব বিরহ যেন বেদনা হয়ে ঝরে পড়ে। প্রিয়তমার জন্য তরুণ কবির এই আকুতি সার্বজনীন হয়ে ওঠে। ‘বৈষ্ণব পদাবলী’-র এক টুকরো কোলাজ ফুটে উঠেছে আধুনিক কবির কলমে।

তরুণ কবি নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। প্রেম-বিরহের পাশাপাশি সমসাময়িক সমগ্র পৃথিবীর রাজনৈতিক পরিবেশ, পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধের তাণ্ডব লীলা, আকাশে মিসাইলের ভয়ংকর শব্দ, খাদ্য ও পানীয়ের জন্য প্যালেস্টাইনের শিশুদের হৃদয় বিদারক কান্না ও মৃত্যুর করুণ কাহিনী ধরা পড়েছে বেশ কিছু কবিতায়। বাস্তবের নিষ্ঠুর পটভূমিকায় লেখা কবিতাগুলি পাঠ করলে পাঠকের চোখে জল যেমন দেখা যাবে তেমনি যুদ্ধ-পাগল রাষ্ট্রনায়কদের প্রতি জমা হবে একরাশ ঘৃণা।

কবির ভাষায় – আসলে জীবনের যে প্রান্তে, যে অবস্থায় আমরা থাকিনা কেন অতীত ঘটনা কখনো ভোলা যায় না- স্মৃতি যেন বারেবারে ছবি হয়ে ফেরে। ফেলে আসা দিনগুলোর প্রেম, বিরহ, যুদ্ধ, মৃত্যু, আশা, তীব্র আকাঙ্ক্ষা মানুষ কি কোনদিন ভুলতে পারবে ? আসলে ভুলতে পারা এত সহজ নয় ! অতীতের স্মৃতি বার বার পিছনের ফেলে আসা দিনগুলোকে মনে করাবেই। তখন পেছন ফিরে তাকাতে হবেই। তাই তো আমার বইটির নাম ‘বারেক ফিরে চাও’।

মণির লেখা কয়েকটি কবিতা পাঠ করে তার উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন দুর্গাপুরের সুপরিচিত কবি তথা শিক্ষিকা অন্তরা সিংহরায় বললেন – যেটুকু পড়লাম তাতে এটা বুঝতে পারছি কবিতাগুলো যথেষ্ট উন্নত মানের। একটা বাচ্চা ছেলে যেভাবে সাহিত্যচর্চায় মেতে উঠেছে তাতে আরও অনেকেই প্রেরণা পাবে। সমৃদ্ধ হবে বাংলা কাব্যজগত।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments