নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুর শহরে দাপিয়ে বেড়ানো বিকট শব্দের বাইকার গ্যাং এবার পুলিশের জালে। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে বেআইনি সাইলেন্সার লাগানো ৫টি বাইক বাজেয়াপ্ত করেছে দুর্গাপুরের বি-জোন ফাঁড়ির পুলিশ। ইস্পাত নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এই বাইকগুলি।
প্রসঙ্গত বেশ কিছুদিন ধরেই দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপ সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল বিকট শব্দ যুক্ত বাইকার গ্যাং। যার জেরে প্রাণ ওষ্ঠাগত শহরবাসীর। বিশেষ করে যে সমস্ত প্রবীণেরা হৃদ রোগ কিংবা স্নায়ু রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও শহরের হাসপাতাল থেকে শুরু করে স্কুলগুলিও বাইকের এই বিকট ও তীব্র শব্দে অতিষ্ট। বিশেষত সন্ধ্যে নামলেই শহর জুড়ে শুরু হয়ে যায় ওই সব বাইকের দাপট।
শহরবাসীর দাবি মূলত স্কুল কলেজের তরুণ ছাত্ররাই বিকট শব্দ যুক্ত ওই লক্ষ লক্ষ টাকা দামী বাইকগুলির মালিক। বাইকগুলোর সাইলেন্সার পাইপ কেটে বিকট শব্দযুক্ত সাইলেন্সার পাইপ লাগিয়ে শহরের রাস্তায় ঝড় তোলে ওই সব তরুণ বাইকাররা। জানা গেছে তিন হাজার টাকা থেকে প্রায় সাত-আট হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে এই বিকট শব্দ যুক্ত সাইলেন্সার পাইপ লাগাতে।
কিছুদিন আগেই আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের উদ্যোগে আয়োজিত “মিট ইওর অফিসার” শীর্ষক অনুষ্ঠানে শহরের প্রবীণ নাগরিকেরা এই বিকট শব্দের বাইকার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। অভিযোগ পেয়েই শক্ত হাতে শহরের এই বাইকার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। ট্রাফিক আইন মোতাবেক এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি যে সমস্ত দোকান ও গ্যারাজ থেকে এই ধরনের সাইলেন্সার পাইপ বিক্রি হচ্ছে বা লাগানো হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
কিন্তু এই তীব্র আওয়াজ যুক্ত বাইক চালানোর নেপথ্যের কারণ কি? অভিযানে স্টিল টাউনশিপের এক বাসিন্দা যুবক শুভজিত অধিকারীর একটি বাইক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। শুভজিতের কথায় ,”এই বাইক চালিয়ে মজা পেতাম তাই চালাতাম। আর চালাবো না। সাইলেন্সার পাইপ পরিবর্তন করে দেবো।” শুভজিতের কাছ থেকেই জানা গেল শহরের ট্রাঙ্ক রোডের গ্যারাজ ও গাড়ির স্পেয়ার পার্টসের দোকানে এই ধরনের সাইলেন্সার পাইপ বিক্রি হয়।
ওইসমস্ত দোকান ও গ্যারাজ মালিকদের বিরুদ্ধে তো বটেই পাশাপাশি অভিভাবকদের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন শহরের সচেতন মানুষ। তাঁদের প্রশ্ন স্কুল কলেজের তরুণ ছাত্রদের হাতে কীভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আসছে? নিশ্চই অভিভাবকরাই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নিজের সন্তানদের হাতে ওই বাইক তুলে দিচ্ছেন। একজন পড়ুয়া বা ছাত্রের হাতে কয়েক লক্ষ টাকার বাইক তুলে দেওয়া কতটা সমীচীন তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে তেমনই প্রশ্ন উঠছে ওইসব অভিভাবকদের কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও।
ওই সব বাইকে বিকট শব্দযুক্ত সাইলেন্সার লাগানোর অনুমতি কীভাবে দিচ্ছেন অভিভাবকরা! তাঁরা কি সন্তান স্নেহে বধির হয়ে গেছেন নাকি শহরের কিছু অর্থবান মানুষজন এভাবেই আর্থের, স্বচ্ছলতার প্রদর্শনী করতে চাইছেন? এবার এইসব অভিভাবকদের বিরুদ্ধেও আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন শহরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজন।