জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরা পূর্ব বর্ধমান-: আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্লেষণ, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা, শৃঙ্খলা, নেতৃত্বের গুণাবলী, ঐক্য, দলবদ্ধভাবে কাজ করা, দেশের স্বার্থে তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা- ইত্যাদি ক্ষেত্রে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নাই। খেলার মাঠের ঘাসের গন্ধ মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত রকমের ক্লান্তি দূর করে দেয়, মস্তিষ্ককে সচল করে তোলে।
তাইতো তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ভারত সরকার ২০১২ সাল থেকে ২৯ শে আগস্ট দিনটি ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ হিসাবে পালন করার কথা ঘোষণা করেছে। কারণ এই দিনটি হলো ‘দ্য উইজার্ড অফ হকি’ নামে পরিচিত ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মেজর ধ্যানচাঁদের জন্মদিন। মূলত তাঁর স্টিকের যাদুতে ভারত অলিম্পিকে পরপর তিনবার হকিতে স্বর্ণপদক জয় করে অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী হয়। প্রতিবছর ভিন্ন ধরনের থিমকে সামনে রেখে এই দিনটি পালন করা হয়। ২০২৪ এর ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’-এর থিম হলো ‘শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রচারের জন্য খেলাধুলা’।
সমগ্র দেশের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. সুদীপ চ্যাটার্জ্জীর উৎসাহে এবং ক্রীড়া বিভাগের প্রধান ড. মণীষা মণ্ডল সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্যান্য অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে গত ২৯ শে আগস্ট যথাযথযোগ্য মর্যাদা সহকারে ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ পালন করা হয়।
এবারের অনুষ্ঠানকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় – অ্যারোবিক্স, বন্ধুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ ও যোগা প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের উপর চৈতালির নৃত্য এবং রিয়া, রিমা, স্নেহা, অনন্যা, মন্দিরা, সোনালী, প্রিয়াঙ্কা, সুপর্ণা, সুকন্যা, চৈতালি, অরূপ, সোনু কার্তিক, সিঞ্চন, সুব্রত, রণজিতের অ্যারোবিক্স উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। বন্ধুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচে গুসকরা মহাবিদ্যালয় প্রতিবেশি ‘আমরা সবুজ’ দলকে ২-০ গোলে পরাস্ত করে। বিজয়ী দল উভয় অর্ধে একটি করে গোল করে। ম্যাচটি ছিল যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
যোগা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে গুসকরা মহাবিদ্যালয়, পি পি ইনস্টিটিউশন ও বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অনুস্কা দাসের যোগা প্রদর্শন বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং মেয়েদের মধ্যে সে প্রথম স্থান অধিকার করে। প্রতিযোগিতার শেষে সফল প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
সঠিক ‘ড্রেস’ ছাড়াই যেভাবে ছেলেমেয়েরা যোগা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে তাতে খুব খুশি এই মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী তথা ক্রীড়াবিদ মলি দাস। তার বক্তব্য – ঠিকমত সুযোগ সুবিধা পেলে এদের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করবে। সে সবাইকে ওদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়।
অধ্যক্ষ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ শঙ্কর ঘোষ, পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী সহ অন্যান্যরা। ক্রীড়া বিভাগের পক্ষ থেকে অতিথিদের যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে বরণ করে নেওয়া হয়।
মণীষা দেবী বলেন – আমাদের অধ্যক্ষের প্রেরণায় ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য ২০১৯ সাল থেকে এই দিনটি পালন করে চলেছি। যদিও করোনা জনিত কারণে দু’বছর বন্ধ ছিল।
শঙ্কর বাবু বলেন – শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য মোবাইল কালচার ছেড়ে দিয়ে বাংলার ছেলেদের মাঠমুখী হতেই হবে।
অন্যদিকে অধ্যক্ষ বলেন – একটা সময় বিদ্যালয়ের ছুটির শেষে খেলার মাঠে ভিড় লক্ষ্য করা যেত। তখন ঠিকমত খেলার সরঞ্জাম পাওয়া যেতনা। আজ সব আছে কিন্তু মাঠে খেলোয়ার নাই। খুবই দুঃখজনক বিষয়।