eaibanglai
Homeএই বাংলায়ট্রাক সংগঠনের দাদাগিরিতে স্তব্ধ শিল্পায়ন জেলাতে

ট্রাক সংগঠনের দাদাগিরিতে স্তব্ধ শিল্পায়ন জেলাতে

মনোজ সিংহ দুর্গাপুর:- আবারও শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে দাদাগিরির ফলে শিল্পের উপর আঘাত হয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকার লাগাতার শিল্পায়নের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখালেও নিচু তালার বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতৃত্বের উস্কানির ফলে আজও শিল্প ও শিল্পের সাথে যুক্ত শিল্পপতিরা বিশাল অংকের টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও একশ্রীর সিন্ডিকেটের দৌরাতে শিল্প ও শিল্পের সম্ভাবনা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইল শিল্পশহর দুর্গাপুর।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা যায়, দুর্গাপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন , দুর্গাপুর গুডস শেড কমপ্লেক্স যা কিনা রেলের পণ্য নামা ওঠা করার জন্য প্লাটফর্ম। সেই প্ল্যাটফর্মে গত কাল সকাল থেকে একটি মাল বোঝাই ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠাই। সূত্র মারফত জানা যায়, স্থানীয় ট্রাক সংগঠনের একটি সিন্ডিকেট তাদের অতিরিক্ত পাওনা গন্ডা বুঝে নেওয়ার কারণেই এই অবরোধ করে রেখেছিলেন।

এদিকে রাজ্যের খ্যাতনামা শিল্প-গোষ্ঠী তাদের বর্ধমান শহরের সংলগ্ন একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার বহু দামি উৎপাদনের জন্য আনা কয়লা বোঝায় একটি রেল সকাল সাতটা থেকে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকার ফলে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ওই শিল্প-গোষ্ঠীর একটি সূত্র মারফত জানা যায়, এখন পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাম্পারের সুবিধা থাকার ফলে, এখন আর তথাকথিত ডালা বডি ট্রাক আর কেউ ব্যবহার করছেন না। তাই তারা একটি বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার ডাম্পার গাড়িতে করে পণ্য বর্ধমানের কারখানায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুর্গাপুর গুডস শেড কমপ্লেক্সে এলে ট্রাক সংগঠনের লোকজনেরা তাদের ডাম্পার গুলি আটকে দেন ও দুর্গাপুর গুডস শেড কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দেন। বন্ধ হয়ে যায় তাদের উৎপাদনের জন্য আনা কয়লা বোঝায় রেলের থেকে মাল নামানোর কাজ। তাদের অভিযোগ যে সংখ্যক ডালা বডি ট্রাক রয়েছে শিল্পাঞ্চলে, তারা নিজেদের মতন করে এলাকা ভিত্তিক সিন্ডিকেট তৈরি করে সেই এলাকার কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করছেন তাও উচ্চ রেটে। এক কথায় বলতে গেলে তারা দাদাগিরি করে ন্যায্য ভাড়ার বদলে দশগুণ বেশি ভাড়া দাবি করে কাজ বন্ধ করে রাখেছেন। এইভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী দিনে তারা কারখানার জন্য পণ্য কিভাবে নিয়ে যাওয়া আসা করবেন তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। এই রকম ঘটনার ফলে দৈনন্দিন তারা কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং কারখানার উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে সময় মত পণ্য সরবরাহ না করার ফলে।

এদিকে এই ঘটনার কথা জানা জানি হতেই স্থানীয় কোক ওভেন থানার পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনা স্থলে গিয়ে পুরো ব্যাপারটি জেনে আসেন। কিন্তু বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বিভাগ অর্থাৎ ল অ্যান অর্ডারের কোন সমস্যা নয় বলে তারা ফেরত চলে যান। এই ঘটনার কোন অভিযোগ তাদের কাছে কোন পক্ষ থেকেই করা হয়নি বলে দাবি করেন স্থানীয় থানার আধিকারিক। তবে যদি আইন-শৃঙ্খলা বা ল-অ্যান-অর্ডারের কোন সমস্যার কোন ঘটনা ঘটে তাহলে তা নিশ্চয়ই নজর দেওয়া হবে বলে ওই থানার পুলিশ আধিকারিক জানান।

রাজ্যের খ্যাতনামা শিল্প-গোষ্ঠীর বর্ধমান শহরের সংলগ্ন বেসরকারি ইস্পাত কারখানার এক বরিষ্ঠ আধিকারিক বলেন, শিল্পের ওপর জোর জুলুম করে একশ্রেণীর ট্রাক মালিকেরা সিন্ডিকেট তৈরি করে আমাদের ওপর জুলুম করছেন। কিন্তু আমাদের হাত বাধা। কারণ যখনই কিছু করতে যাওয়া হবে তখনই তার একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বের করা হবে। শুরু হয়ে যাবে রাজনৈতিক তরজা। তাই এই লোকসভা নির্বাচনের সময়ে তারা কোনো রাজনৈতিক সমস্যার মধ্যে পড়তে চান না। পশ্চিমবঙ্গে তারা শান্তিপূর্ণভাবে বহুকাল ধরেই ব্যবসা করে আসছেন কোন বড় সমস্যার সম্মুখীন না হয়ে। তার প্রধান কারণ হলো রাজ্য সরকারের শিল্প ও শিল্পের সম্ভাবনার জন্য পূর্ণ সহযোগিতা। কিন্তু ইদানিং কালে বেশ কিছু উটকো ট্রাক মালিক সংগঠনের নাম করে তাদের ওপর দৈনন্দিন কারখানার পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ করার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি আরো জানান অবিলম্বে তারা এ বিষয়ে সমস্ত ঘটনার কথা রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্তারিত ভাবে জানাবেন এবং এই অনৈতিক জুলুমবাজি বন্ধ করার অনুরোধ জানাবেন।

আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত দুর্গাপুর পূর্ব এলাকার ডিসিপি অভিষেক গুপ্ত কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান আইন-শৃঙ্খলা জনিত কোন সমস্যার এখনো অবধি কোথাও সেভাবে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে পুলিশ এই রকমের একটি ঘটনার কথা সুত্র মারফত জানতে পেরে ইতিমধ্যেই এই সমস্যার সুষ্ঠ সমাধানের চেষ্টা ও খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমরা আমাদের স্তরের তদন্ত করে দেখছি বলে তিনি জানান।

এই ঘটনার বিষয়ে দুর্গাপুর মহকুমা শাসক ডক্টর সৌরভ চ্যাটার্জিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তিনি পুরো ঘটনাটি এখনো পর্যন্ত জানেন না। তবে তিনি তার সহকর্মীদের ইতিমধ্যেই ঘটনার বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে তাকে অবগত করার কথা জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সঠিক অভিযোগ প্রমাণ হলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনভাবেই শিল্প ও কল-কারখানা ওপর কোনরকম অনৈতিক জুলুমবাজি সহ্য করবে না দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন।

অন্যদিকে দুর্গাপুর ট্রাক সংগঠনের এক কর্তা জানান, আমরা প্রতি রেল পণ্য খালি করার জন্য আগে ৮০ হাজার টাকা করে পেতাম । এখন খরচ খরচা বেড়ে যাওয়ার ফলে আমরা ঠিকাদারের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাবি করছি। আমাদের দাবি না পূরণ হওয়া পর্যন্ত দুর্গাপুর রেলস্টেশনে ওই শিল্প গোষ্ঠীর কোন পণ্যই আমরা খালি হতে দেব না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তাকে প্রশ্ন করা হলে কেন এভাবে ওই শিল্প গোষ্ঠীকে এত বড় ক্ষতির মুখে ফেলছেন? রেলের পণ্য খালি করার পর কেন আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান কেন করছেন না? উত্তরে তিনি জানান মালিক পক্ষকে এ বিষয়ে বহুবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা টাকা বাড়ানোর কোন কথাই আজ অবধি বলেননি । তাই বাধ্য হয়ে আমরা এই আন্দোলনের পথ নিয়েছি।

দুর্গাপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক দলের শ্রমিক নেতা বলেন, শিল্পাঞ্চলের দু এক জন শীর্ষস্থানীয় নেতা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত কল-কারখানা গুলির ওপর নিরন্তর অত্যাচার চালাচ্ছে। যার ফলে দলের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই সকল নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নের গতি থেমে যাবে। জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলনের নামে তোলা আদায়ের এই নতুন কায়দাকে যত শিগগিরই কড়া হাতে মোকাবেলা করা যায় ততই ভালো। পশ্চিমবঙ্গ যখন দেশের শিল্পায়নের নতুন অগ্রগতি দেখাচ্ছে। ঠিক তখনই এই সকল উটকো আগাছা স্বঘোষিত নেতাদের উস্কানিতেই এ হেনো আঘাত আসছে শিল্পাঞ্চলের কারখানা গুলিতে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে তিনি এও জানান দল সবদিকে নজর রাখছে। অবিলম্বে যাতে ওই সকল দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেদিকে সচেষ্ট হবে দল বলে তিনি জানান।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments