সূচনা গাঙ্গুলি,কলকাতাঃ- দুর্গাপুজো মানেই বন্ধুদের সঙ্গে নতুন ডিজাইনের জামাকাপড় পড়ে সেজেগুজে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখে বেড়ানো, রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া দাওয়া করা, সঙ্গে একটু মস্তি। পড়াশোনার চাপ থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে কচিকাচাদের আনন্দ সবার চোখে পড়ে। পুজো মণ্ডপে গৃহবধূদেরও দেখা যায়। পুজোর সময় এটা খুব পরিচিত দৃশ্য।
উল্টোদিকে পুজোর হাত ধরে প্রকাশিত হয় একাধিক শারদীয়া পত্রিকা। মহালয়ার অনেক আগে থেকে পত্রিকাগুলো বাজারে চলে আসে। কাব্যপ্রেমী মানুষ অধীর আগ্রহে বসে থাকে তারই অপেক্ষায়। প্রবীণদের পাশাপাশি নবীন কবি প্রতিভাদের লেখনি কাব্য পিপাসু পাঠকের মন ভরিয়ে দেয়।
তবে গত কয়েকবছর ধরে পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। পাঠকের রুচি ও দামের জন্য এখন অতীতের মত চাহিদা আর দেখা যায়না। তবে তার মাঝেও কিছু পত্রিকা গোষ্ঠী আজও তার স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেছে। এরকম একটি পত্রিকা হলো ‘জাগোদুর্গা’। মহাবঙ্গ সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত এই পত্রিকাটি গত চৌত্রিশ বছর ধরে কাব্যরসিক পাঠকের কাব্যপিপাসা মিটিয়ে চলেছে।
সম্প্রতি কলকাতার অবনীন্দ্র সভাঘরে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রায় দুই শতাধিক কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্যনিষ্ঠ চিন্তাবিদ, সঙ্গীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের উপস্থিতিতে দেবীপক্ষে কবিপ্রণাম এবং শারদীয়া ‘জাগোদুর্গা’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি তথা চিকিৎসক ডা.শ্যামল গোস্বামী, সাহিত্যিক তথা শিক্ষক সন্তোষ খাঁ, কবি ও নাট্যকার সুস্মেলী দত্ত, বাচিকশিল্পী তথা চিকিৎসক ডা. অমৃতা ভট্টাচার্য, কবি লোপামুদ্রা মুখার্জ্জী এবং মহাবঙ্গ সাহিত্য পরিষদের সভাপতি তপন সাহা সহ অন্যান্যরা।
অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন কবিরা উপস্থিত হন তেমনি আসামের বেশ কয়েকজন সুপরিচিত কবি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অসমীয়া কবি রুপালী বরা সইকীয়া, দিলীপ কুমার পারোজলি ও জোনমণি বরার কবিতা পাঠ উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। সঙ্গীত, স্বরচিত কবিতা পাঠ, কাব্য সম্পর্কে মননশীল আলোচনার মধ্যে দিয়ে দুপুর ১২ থেকে রাত্রি ৯ টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা কীভাবে কেটে যায় টের পাওয়া যায়নি। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অমৃত ভট্টাচার্য। তার সঞ্চালনা অনুষ্ঠানটিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। সব মিলিয়ে এক সুন্দর অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকার সুযোগ পান উপস্থিত ব্যক্তিরা।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক রণেন্দ্রনাথ দাস। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গলায় উত্তরীয় পরিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়।
তপন বাবু বললেন – শত পরিবর্তন সত্ত্বেও আজও শারদীয়া পত্রিকা একাংশ বাঙালি পাঠককে টানে। কোনো এক অলস দুপুরে সেটাই হয় তাদের সঙ্গী। আশাকরি ভিন্ন স্বাদের কবিতা সমৃদ্ধ ‘জাগোদুর্গা’ পত্রিকাটি পাঠকের মনের ইচ্ছে পূরণ করবে।