সংবাদদাতা, পারুলিয়া :- সাত বন্ধু মিলে গত তিন বছর আগে পারুলিয়ার আস্ত একটা আদিবাসী গ্রামকে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে দত্তক নিয়েছে। এই বংশিবেড়া গ্রামের দিনদরিদ্র, দুঃস্থ পিছিয়ে পড়া মানুষদের একত্রিত করে নিরলস পরিশ্রম করে উন্নয়নের কাজ করে চলেছেন বন্ধুরা। রীতিমত নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে আদিবাসীদের সাথে জড়িয়ে একজোট হয়ে উন্নয়নে নেমেছেন কমলেন্দু ঘোষ, তড়িৎ চক্রবর্তী, পিনাকী ঘোষ, বিকাশ পাল, ঝুমা লাহিড়ী, সিমা ঘোষ, নীলা ঘোষদের মত জীবন বীমার কর্মীরা । ভরা শীতের জমানায় পারুলিয়া বংশী বেড়ার মতো বেশ কয়েকটি গ্রামে কান পাতলেই শুধু ভেসে আসে ঢেঁকির আওয়াজ। ঢেঁকি বসানো হয়েছে। সাবেক ঢেঁকি আগলেই আয়ের রাস্তা খুঁজে বার করেছেন ওই সব গ্রামের মহিলারা। উদ্যোগীদের অন্যতম কমলেন্দু ঘোষ জানান তেপান্তর নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। এই গ্রামে একটা ফুটবল দল তৈরি করা হয়েছে। সেই খেলোয়াররা বাইরে টুর্নামেন্টে খেলতে যান। আমাদের সব বন্ধুদের একটাই নজর গ্রামের উন্নয়ন চাই। গোটা বছর ঢেঁকিছাঁটা চালের চাহিদা থাকে। ঢেঁকি ছাটা চাল উৎপাদন করে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি চলছে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে। গ্রামের মহিলাদের দাবি, ‘‘ গ্রামে আগে জল ছিল না ছেলে মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার চল ছিল না কিন্তু দাদারা সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাঁদের জন্য বাড়তি আয়ের মুখ দেখেছি আমরাও।’’ আরতি হেমরম পূর্ণিমা টুডু রা আজ স্বনির্ভর।
“ঢেঁকিতে ভাঙানো চালের গুঁড়ি দিয়ে পিঠে-পুলি বানানোর স্বাদটাই আলাদা। তা ছাড়া ঢেকিতে ভাঙানো চাল অনেক দিন ধরে রেখে দেওয়া যায় বাড়িতে । স্বাদের কোন পরিবর্তন হয় না ”। পুরুষেরাও এখন পরিবারে সাহায্য করেন। বাড়তি টাকা সংসারের কাজে লাগে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেয়াল এখন পটচিত্রে ঢেকে গেছে। প্রান্তিক এই গ্রামের প্রতিটি মাটির বাড়ির দেওয়াল রঙিন হয়ে উঠেছে। ফাঁকা জায়গা বা খামার বাড়িতে চাঁদোয়া টাঙিয়ে পাড়ার মহিলারা জড়ো হন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ করার জন্য । দুর্গাপুর নগর নিগম থেকে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে এই গ্রামে।
এখানে ১০০ দিনের কাজে টাকা না পাওয়া, শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো এখন আলোচ্য বিষয় নয়। নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোই গ্রামের মানুষের এখন মূল লক্ষ্য। গ্রামের কাজের মানুষ এখন গোটা গ্রাম জুড়ে উন্নয়নের চেতনা জায়গাতেই ব্যস্ত। আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি নিয়ে আরতী হেমব্রম বলেন আমাদের লোকজীবনের কথাই বরাবর থাকে বংশীবেরা গ্রামে। সামাজিক সচেতনার বিষয়টি নিয়ে তারই অঙ্গ হিসাবে কাজ করে চলেছে।