eaibanglai
Homeএই বাংলায়শালপাতা সংগ্রহ ও থালা তৈরি - কষ্টকর কাজ

শালপাতা সংগ্রহ ও থালা তৈরি – কষ্টকর কাজ

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- ‘এ্যাই লোকজন এসে গেছে, পাতা দিতে শুরু কর’ – পারিবারিক হোক বা সামাজিক যেকোনো উৎসবে উদ্বিগ্ন গৃহকর্তার মুখ থেকে নিঃসৃত এই বাক্য বন্ধনী শোনার সৌভাগ্য আমন্ত্রিতদের সঙ্গে পরিবেশনকারী – সবার হয়েছে।

আমন্ত্রিত অতিথিদের অপেক্ষায় বসে থাকা পরিবেশনকারীরা নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শালপাতা দিয়ে তৈরি থালা খাওয়ার টেবিলে সাজাতে শুরু করে। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন কৃত্রিম থালা বাজারে এলেও শালপাতা দিয়ে তৈরি থালা এখনো অনেকেই পচ্ছন্দ করে। শালপাতা দিয়ে শুধু থালা নয় বাটিও তৈরি হয়। সেগুলি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করেনা।

এই শালপাতা দিয়ে থালা, বাটি তৈরির পেছনে অনেক মেহনত ও ঝুঁকি লুকিয়ে আছে। কিন্তু পরিশ্রমের তুলনায় আয় খুব কম। তারই করুণ কাহিনী শোনা গেল আদিবাসী অধ্যুষিত আউসগ্রামের আদিবাসী কন্যা ছবি মাড্ডির কাছ থেকে।

পূর্ব বর্ধমান জেলা কৃষিপ্রধান হলেও সেচ বা বৃষ্টির জলের অভাবে জঙ্গল অধ্যুষিত আউসগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় কৃষিকাজ যথেষ্ট কম হয়। পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজতেই হয়। বাড়ির পুরুষরা অন্য এলাকায় কাজ করতে যাওয়ার সুযোগ পেলেও মহিলারা সবসময় সেটা পায়না। সংসারের প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গল থেকে শালপাতা সংগ্রহ করে থালা তৈরি করাকে তারা আয়ের উৎস হিসাবে বেছে নেয়।

দিনের আলো ফোটার আগেই শালপাতা সংগ্রহ করার জন্য ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করতে হয়। প্রথম ভয় হিংস্র বন্যপ্রাণী ও বিষধর সাপের। সেগুলোর হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেলেও অনেক সময় নারীলোভী মানুষের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়না। নির্জন জঙ্গলের সুযোগ নিয়ে অসহায় নারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নারীলোভীরা। পেটের দায়ে শালপাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে নিজের সম্মান নষ্ট করতে হয়।

পাতা সংগ্রহ করে সেগুলো রোদে শুকাতে দিতে হয়। সেখানেও মাঝে মাঝে প্রক‍ৃতিও শত্রুতা শুরু করে। কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি! বৃষ্টির হাত থেকে পাতাগুলো রক্ষা করতে বাড়ির বাচ্চাদেরও অনেক সময় হাত লাগাতে হয়। ভিজে গেলে আবার নতুন করে শুকাতে হবে। বৃষ্টির জন্য কিছু পাতা নষ্ট হয়ে যায়।

সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে সন্ধ্যার সময় শুরু হয় থালা তৈরির কাজ। একটার পর একটা পাতা সাজিয়ে তৈরি করা হয় থালা। মাঝে মাঝে বাড়ির পুরুষরাও থালা তৈরির কাজে হাত লাগায়। কাজটা যথেষ্ট কষ্টের। অনেক সময়, বিশেষ করে উৎসব মরশুমে, পাতা তৈরি করতে গিয়ে রাত শেষ হয়ে যায়।ক্লান্ত শরীর নিয়ে পরদিন আবার শুরু হয় পাতা তোলার কাজ।

অবশেষে থালার ‘বোঝ’ তৈরি করে সেগুলি তুলে দিতে হয় মহাজনের হাতে। এত পরিশ্রমের বিনিময়ে যথাযথ মজুরি পাওয়া যায়না। যেটা পাওয়া যায় তাতে আর যাইহোক পেট ভরেনা।

ছবি দেবী বললেন – পাতা তোলা থেকে থালা তৈরি পর্যন্ত অনেক কষ্ট করতে হয়, মজুরি পাওয়া যায়না। শালপাতার থালা মূলত উৎসব বাড়ি ও হোটেলে ব্যবহার করা হয়। এখন সেখানে কৃত্রিম থালার ব্যবহার বেশি। ফলে চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে আয়ও কমছে। সরকার যদি আমাদের কথা ভেবে কিছু একটা ব্যবস্থা করে তাহলে খুব ভাল হয়। ভালভাবেই সন্তানদের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারব।

স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার বললেন – অবশ্যই ওদের সমস্যা নিয়ে কুটির শিল্প দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করব। আশাকরি ভাল কিছু একটা হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments