জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মেমারিঃ- ওরা হলেন ডিএম, এসডিও, বিডিও – প্রশাসনের উচ্চস্তরে অবস্থান করেন। ওরা দাম্ভিক, সাধারণ মানুষকে গুরুত্ব দেননা – কার্যত এই অভিযোগ প্রায়শই ওঠে ওদের বিরুদ্ধে। এই আপাত গম্ভীর মুখের অন্তরালে যে একটা মানবিক মুখ লুকিয়ে আছে তার সাক্ষী থাকার সুযোগ পেল মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা রুগী ও তাদের পরিজনেরা।
৯ ডিসেম্বর। মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসছিলেন বর্ধমান সদর মহকুমাশাসক (দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু কুমার মণ্ডল। হাসপাতালে ঢোকার সময় তিনি লক্ষ্য করেন জনৈক ব্যক্তি একজন বৃদ্ধাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। বৃদ্ধার দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকু পর্যন্ত নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চরম সমস্যায় পড়ে।
বিষয়টি লক্ষ্য করে মহকুমাশাসক গাড়ি থেকে নেমে ছুটে যান সেই বৃদ্ধার কাছে। পরবর্তী ঘটনার জন্য কেউই মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেননা। বাস্তবে সেভাবে দেখতে অভ্যস্ত নন। সবাইকে চমকে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমেই মহকুমাশাসক সেই বৃদ্ধাকে কোলে করে তুলে নিয়ে সোজা আউটডোরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন সঙ্গে থাকা মেমারি-১নং ব্লকের বিডিও শতরূপা দাস।
জানা যায় রসুলপুরের নতুন রাস্তার বাসিন্দা অমিয়া সরকারকে (৭৫)সঙ্গে নিয়ে তাঁর নাতবৌ নিপা সরকার চিকিৎসার জন্য মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে এসেছিলেন।নিপা দেবীর সঙ্গে কেউ না থাকায় একজন টোটোচালক বৃদ্ধাকে কোনোরকমে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। পরের ঘটনা সবার সামনেই ঘটে।
টোটোচালক শ্যামল বলেন – আমি আমার পরিচিত ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে কষ্ট করে আউটডোরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একজন গাড়ি থেকে নেমে এসে আমাকে সাহায্য করলেন। পরে জানতে পারি উনি এসডিও।বড় অফিসার হয়েও একজন রুগীকে নিজে কোলে করে নিয়ে গেলেন – ভাবলে সত্যিই অবাক হচ্ছি। পরে উনি অবশ্য একটা হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দেন।
মহকুমাশাসক বললেন- এমন কিছু করিনি যারজন্য বাহবা দিতে হবে। আমার প্রথম পরিচয় আমি একজন মানুষ এবং মানুষ হিসাবেই এইটুকু কাজ করেছি।