মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর :- রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে এবং আনন্দধারা প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণবঙ্গের ৫টি জেলা ও প্রায় ১২০ টির বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দ্বারা নির্মিত হস্তশিল্পের সম্ভার নিয়ে শুরু হতে চলেছে ‘সৃষ্টিশ্রী’ মেলা। আগামী ১৯শে জানুয়ারি থেকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার সংলগ্ন পলাশডিহায় অবস্থিত দুর্গাপুর হাট প্রাঙ্গণে শুরু হবে। এই সৃষ্টিশ্রী মেলা চলবে পাঁচ দিন অর্থাৎ ১৯শে জানুয়ারি থেকে ২৩ শে জানুয়ারি। মেলাটি শুরু হবে প্রতিদিন বেলা ১টা থেকে চলবে রাত্রি ৯টা অবধি। শুক্রবার বিকেলে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার সংলগ্ন পলাশডিহায় দুর্গাপুর হাটে সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান সুভাষ মন্ডল, এসিপি দুর্গাপুর তথাগত পান্ডে, তুহিন চৌধুরী সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
এদিন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন,”এই মেলাটিতে দক্ষিণবঙ্গের ৫টি জেলা বীরভূম, বাঁকুড়া , পুরুলিয়া পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বিখ্যাত মহিলা দ্বারা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উৎপাদিত মূল্যবান সামগ্রী এই প্রথমবার দুর্গাপুর হাটে প্রদর্শিত ও বিক্রি করা হবে। প্রায় ১২০ টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই মেলায় অংশগ্রহণ করবেন। বিশ্ব বিখ্যাত বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বালুচরি, স্বর্ণ চুরি, পাঁচমুড়ার মাটির টেরাকোটার সামগ্রি, বিকিনা গ্রামের ডোগরা শিল্প, পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছো নাচের মুখোশ সহ বীরভূমের বিখ্যাত কাঁথা সেলাইয়ের বিপুল সম্ভার নিয়ে হাজির হবেন শিল্পীরা এই মেলাতে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল তথা তার আশেপাশে এলাকার সমস্ত ক্রেতারা সহজেই ও সঠিক মূল্যে সরাসরি হস্তশিল্পীদের কাছ থেকে তাদের সামগ্রিক ক্রয় করতে পারবেন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মেলাতে যে সকল হস্তশিল্প ও সামগ্রী প্রশংসিত হয়েছে সেই সব সামগ্রীর এক বিশাল সম্ভার নিয়ে শুরু হবে এই মেলা। রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় বাংলার প্রতিটি মা-বোনকে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। হস্তশিল্পের বিখ্যাত সামগ্রীর জন্য দুটি প্যাভিলিয়নও করা হবে। সঙ্গে আঞ্চলিক হস্তশিল্পীরাও এই মেলায় যোগ দেবেন। সরাসরি ক্রেতাদের কাছে সেই সামগ্রী তুলে দিয়ে লাভের মুখও দেখবেন হস্তশিল্পীরা।”
এই সৃষ্টিশী মেলাতে আগত সকল ক্রেতাদের মনোরঞ্জন ও বিনোদনের জন্য উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের বিখ্যাত বেশ কয়েকজন নাম করা শিল্পী। কার্তিক দাস বাউল, সুরজিৎ চ্যাটার্জি ব্যান্ড সহ দোহারের গান প্রাণবন্ত করে তুলবে এই মেলাকে। মেলা চলাকালীন প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে স্থানীয় শিল্পীরা তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন , যার মধ্যে থাকবে গান, আবৃত্তি, নাচ , সেমিনার সহ বিভিন্ন বিষয়ক আলোচনা সভা। স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরকে হাতে-কলমে শেখানো হবে হস্তশিল্পের বিভিন্ন কলা, যাতে তারা নিজেদের পায়ে স্বাবলম্বী হয়ে লাভের মুখ দেখতে পান । সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এও জানানো হয় যে দুর্গাপুরের সমস্ত বেসরকারি ও সরকারি স্কুলের কচিকাঁচাদের এই সৃষ্টিশ্রী মেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে এই মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের সূচিপত্র দিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণবঙ্গ পরিবহন সংস্থার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বাস চালানো হবে এই মেলার ক’দিন, যাতে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ও তার আশেপাশের মানুষজন সহজেই মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছে যেতে পারেন শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন অংশ থেকে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মহিলা দ্বারা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা আগামী বেশ কয়েকদিন বিভিন্ন পদযাত্রা, স্ট্রিট কর্ন , ট্যাবলো সহ ভারতীয় সংগীতের অন্যতম অঙ্গ সানাইয়ের সুরে শিল্পাঞ্চলবাসিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে এই মেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য। এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে সহজেই আন্দাজ করা যায় এবারের এই সৃষ্টিস্ত্রী মেলা গত সমস্ত মেলার রেকর্ড সহজেই ভেঙে ফেলবে শিল্পাঞ্চল দূর্গাপুরে।
