সন্তোষ কুমার মণ্ডল, আসানসোলঃ– অগ্নিমিত্রা পালের পর এবার জিতেন্দ্র তিওয়ারি। শিল্পাঞ্চলের নদী গুলি দখল করা, ভরাট করা, নদী পথ বদলে দেওয়া নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হলেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। পাল্টা জবাব দিল শাসকদল তৃণমূলও।
আসানসোলের জামুরিয়া ব্লকের চুরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অজয় নদ অবৈধভাবে ভরাট করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নাবলমকে চিঠি লিখেছেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, এক বেসরকারি কয়লা কোম্পানি অবৈধভাবে অজয় নদের একটি বড় অংশজুড়ে যেভাবে ভরাটের কাজ শুরু করেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শুধু তাই নয়, তিনি জানিয়েছেন জামুরিয়ার একাধিক বড় কারখানা সেই এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিঙ্গারন নদীর পার দখল করার পাশাপাশি, তারা নদীর গতিপথও ঘুরিয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে জেলাশাসককে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
চিঠি লেখার পাশাপাশি রবিবার তিনি নিজে চুরুলিয়ার অজয় নদের ঘাট সহ সিঙ্গারন নদীর বিস্তীর্ণ অংশ ঘুরে দেখেন। সোমবার এই প্রসঙ্গে জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, “অজয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদ ভরাট করে তার ওপর দিয়ে হয়তো কয়লা বালি পাচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরফলে নদীর গতিপথ শুধু নষ্ট হচ্ছে না, পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইভাবে তিনি অভিযোগ করেন, জামুরিয়ার মানুষের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সিঙ্গারন নদীর অস্তিত্বই শেষ করার চেষ্টা চলছে। একাধিক কারখানা এই নদীর বেশ কিছু অংশ দখল করেছে। বিষয়গুলি আমরা ইতিমধ্যেই জামুরিয়া পুলিশকে জানিয়েছি। সাত দিনের মধ্যে যদি পুলিশ অভিযুক্ত বেসরকারি কয়লা সংস্থা এবং জামুরিয়ার কারখানাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা বৃহত্তম আন্দোলন শুরু করবো।”
অন্যদিকে রবিবার অজয়ের ঘাট পরিদর্শন করতে গিয়ে বিজেপি নেতা দেখেন যে অংশে বেসরকারি কয়লা সংস্থার দ্বারা অজয় নদ ভরাটের অভিযোগ উঠেছে সেখানে কিছু গাছ লাগানো রয়েছে। আর তা দেখে প্রাক্তন মেয়র দাবি করেন নদী দখলের বিষয়টি ঢাকতেই ওই এলাকায় তড়িঘড়ি গাছ লাগানো হয়েছে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না বলে শাসক দলকে কটাক্ষও করেন তিনি।
যদিও বিজেপি নেতার অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করে, জিতেন্দ্র তিওয়ারির অভিযোগ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। মোটেই নদী দখল করা হয়নি। দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে অজয়ের পারে গাছ লাগানো হয়েছে। অন্যদিকে জিতেন্দ্র তেওয়ারির চিঠি ও তার করা অভিযোগ নিয়ে জেলাশাসক দপ্তরের তরফে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
প্রসঙ্গতঃ, জামুরিয়ার একাধিক কারখানা সিঙ্গারন নদী দখল করেছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছে। এবং বিষয়টি নিয়ে মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশে একাধিক তদন্ত হয়েছে। ওইসব কারখানাগুলি বন দপ্তরের জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে ইতিমধ্যে বন দপ্তরের পক্ষ থেকেও আদালতে মামলাও করা হয়েছে।