নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ দুর্গাপুর শহর জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষের বিঘার পর বিঘা ফাঁকা জমি। মাঝেমধ্যেই দুর্গাপুর জুড়ে শুরু হয় এই দুই তরফে বেআইনী দখলদারী উচ্ছেদ অভিযান। পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে এবং উচ্ছেদ অভিযানের অনুমোদন নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চলে জেসিবি চালিয়ে বেআইনিভাবে দখল করা জমিতে দোকানপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর। যদিও এতে কোনও মাথাব্যাথা নেই আম দুর্গাপুরবাসীর। থাকার কথাও নয়। কারণ, যেসমস্ত সাধারন মানুষ ডিএসপি ও এডিডিএ-র জায়গা দখল করে দিন গুজরান করেন তাঁরাও খুব ভালো করেই জানেন আজ নয়তো কাল তাদের বেঘর হতেই হবে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, এই উচ্ছেদ অভিযানের পরিকল্পনাহীনতাকে কেন্দ্র করে। কিছুদিন আগেই দুর্গাপুরের ভগৎ সিং মোড় থেকে শুরু করে আড়রা মোড় পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরীর সময় আবারও বেআইনি জমি দখলদারী উচ্ছেদ অভিযানে হাত লাগায় এডিডিএ। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রবল প্রতিরোধে ভাটা পড়ে সেই উচ্ছেদ অভিযানে। আবার দুর্গাপুরের বি-জোন বস্তি এলাকাতেও একই ঘটনা। সেখানে ডিএসপি-র জেসিবি বেআইনি দখলদারী উচ্ছেদ অভিযানে পৌঁছাতেই কয়কশো যুবক ও মহিলারা জেসবির সামনে দাঁড়িয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের বক্তব্য ছিল, ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ঘর ভেঙে দিক, কিন্তু তাদের দেহের উপর দিয়েই পেরোবে জেসিবি। স্বভাবতই মানব প্রতিরোধে ফের বন্ধ হয়ে যায় ডিএসপির উচ্ছেদ অভিযান। এই দুই ক্ষেত্রেই উচ্ছেদ অভিযানের বৈধতা ছিল দুপক্ষের হাতেই, ছিল পুলিশি নিরাপত্তাও। কিন্তু কোনও এক অদৃশ্য কারণে দুজায়গাতেই উচ্ছেদ অভিযান ধাক্কা খায় এবং ফের অনির্দিস্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় জমি পুনর্দখলের কাজ। এই ঘটনা একবারের নয়, গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুর শহর জুড়ে এই ঘটনা প্রায় নিয়মমাফিক হয়ে গেছে। আর সম্ভবত সেই কারণেই দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারে বিগ বাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল করে গজিয়ে ওঠা সমস্ত দোকান এডিডিএ-র তরফে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেও ফের দোকান তৈরী করার সাহস পেয়ে যায় হকাররাও। কিন্তু কেন? কেন বারবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেও তা মাঝপথে ছেড়ে দিতে হয় এই খোদ এডিডিএ বা ডিএসপিকে? এর পেছনেও কি কোনও রাজনৈতিক চাপ কাজ করছে? বেআইনি জমি থেকে সাধারণ মানুষকে উচ্ছেদ করলে তার প্রভাব পড়তে পারে ভোটব্যাঙ্কে এই ভয়েই কি বারবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেও পিছিয়ে আসতে হচ্ছে? তাই যদি হয় তাহলে তো সামনেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন। আর সেই কারণেই কি রাজনৈতিক চাপে রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হল দুই তরফে উচ্ছেদ অভিযান? গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার দুর্গাপুরের এ-জোনে এক জনকল্যাণমূলক একাধিক প্রকল্পের শিলন্যাসের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এডিডিএ চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি উত্তম মুখার্জী সহ অন্যান্যরা। সেখানে এডিডিএ-র তরফে জানানো হয় জনগনের সুবিধার্থে ডিএসপি কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে স্টীল টাউনশিপ এলাকায় একাধিক বাসস্ট্যান্ড, নিকাশী নালা তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে পুরসভা। কিন্তু এই একই কথা ডিএসপি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাদের সাফ জবাব, শুধুমাত্র বাসস্ট্যান্ড তৈরীর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাহলে কী দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও সরাসরি সংঘাত শুরু হয়ে গেল শাসকদল তথা এডিডিএ-র? শুক্রবার দুই তরফে দুই ভিন্ন বয়ান তো অন্তত সেইদিকেই ইশারা করছে।