জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হাওড়াঃ- সম্পত্তি সংক্রান্ত পারিবারিক বিবাদ, দাম্পত্য কলহ সহ বেশ কিছু দেওয়ানি মামলার বিচার কম খরচে ও দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৯৮৭ সালে ভারতে লোক আদালত চালু হয়। যদিও এর জন্মলগ্ন হলো ১৯৮২ সাল। মূলত আদালতের বাইরে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সম্মতিতে অভিযোগগুলি সমাধান করার জন্য ভারতে এই বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা হয়। বিচারপতির সঙ্গে আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সমাজসেবী সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এই লোক আদালতের সদস্য হন। সাধারণ মানুষও লোক আদালতের উপর ভরসা করে। ফলে গত কয়েক বছর ধরেই ধীরে ধীরে এই লোক আদালত সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গত ৯ ই সেপ্টেম্বর সমগ্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে হাওড়া জেলা ও দায়রা বিচারক তথা জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শ্রীমতী সোনিয়া মজুমদারের নেতৃত্বে এবং জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের সচিব সুপর্ণা সরকারের পরিচালনায় ২০ টি বেঞ্চ বসে। এদের মধ্যে জেলার সদর আদালতে ১৭ টি এবং উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে ৩ টি বেঞ্চ হয়।
লোক আদালতের ৬ নং বেঞ্চে পকসো বিচারক সৌরভ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে নথিভুক্ত ১১৬ টি মামলার মধ্যে ৯৩ টির নিস্পত্তি হয়েছে এবং নিস্পত্তি মামলার অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। এই বেঞ্চে গাড়ি দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলা উঠে।
প্রসঙ্গত এই বেঞ্চের অন্য দুই সদস্যের অন্যতম ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী তথা ‘হাইকোর্ট সংবাদদাতা’ মোল্লা জসিমউদ্দিন যিনি এর আগেও দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অন্যান্য বিচার প্রার্থীদের সহমতের ভিত্তিতে এই বেঞ্চের মূল বিচারক মাননীয় সৌরভ ভট্টাচার্য প্রবীণ বিচারপ্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেন। বিচারকের মানবিকতায় প্রবীণ বিচার প্রার্থীরা মুগ্ধ হন।
এছাড়া অন্যান্য বেঞ্চে ট্রাফিক, মানি স্যুট, টাইটেল স্যুট, ব্যাংক, এনজিআর, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিবাদ প্রভৃতি বিষয়ক মামলার নিস্পত্তি ঘটে। হাওড়া জেলা আদালতে বেঞ্চে মামলার নিষ্পত্তির জন্য বিচারকের সহযোগী হিসাবে শিক্ষক, আইনজীবী, সমাজসেবী, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্ত করা হয়। সারাদিন ব্যাপী শুনানির পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়। এরফলে প্রত্যেকের মুখে খুশির ঝিলিক দেখা যায়।
হাওড়া জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের অফিস মাস্টার প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য জানান – এদিন জাতীয় লোক আদালতে ৭২৬৯ মত মামলা নথিভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ৫৯৬২ এর মত মামলার নিস্পত্তি ঘটে এবং প্রায় ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার মত আদায় হয়।
আইনি পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা প্রয়াত বিচারপতির পুত্র মোল্লা জসিমউদ্দিন বললেন – সত্যিই এটা এক আলাদা অভিজ্ঞতা। বহু মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় খুব ভাল লাগছে।