eaibanglai
Homeএই বাংলায়অপেশাদার যাত্রা শিল্পীদের পাশে 'আমরা যাত্রা ভালবাসি' সংস্থা

অপেশাদার যাত্রা শিল্পীদের পাশে ‘আমরা যাত্রা ভালবাসি’ সংস্থা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, মঙ্গলকোট, পূর্ব বর্ধমান -: একটা সময় গ্রাম বাংলার যেকোনো উৎসবে বিনোদনের অন্যতম উপকরণ ছিল গ্রামের দলের অর্থাৎ অপেশাদার যাত্রা। মূলত পাড়ার কোনো জমিদার বাড়ির আর্থিক আনুকূল্যে এই যাত্রার যাত্রাপথ শুরু হয়। পরে পাড়ার ছেলেরা চাঁদা তুলে যাত্রা চালিয়ে যেত। এইভাবেই গত প্রায় ৫০০ বছর ধরে অপেশাদার দলের যাত্রা চলে আসছে। অপেশাদার যাত্রা দলের হাত ধরে যেমন বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয় তেমনি এই দলগুলো চিৎপুরের পেশাদার যাত্রা দলগুলোর জন্য শিল্পী সরবরাহ করে থাকে। এক কথায় অপেশাদার যাত্রা দলগুলো যাত্রা শিল্পের ‘লাইফ লাইন’।

কিন্তু আর্থিক সহ নানান কারণে গ্রাম্য সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম সম্পদ অপেশাদার যাত্রার অতীত ঐতিহ্য আজ অস্তগামী। এই জগতের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা তীব্র হতাশ। তার মাঝেও বেশ কিছু যাত্রাপ্রেমী সংস্থা এই প্রাচীন শিল্প ও শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরকমই একটি সংস্থা হলো ‘আমরা যাত্রা ভালবাসি’। সম্প্রতি সংস্থার পক্ষ থেকে অপেশাদার যাত্রা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দুস্থ শিল্পীদের হাতে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলকোটের মাথরুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘বিশ্বনাথ চক্রবর্তী’ এবং ‘শান্তি চক্রবর্তী’-র স্মৃতির উদ্দেশ্যে পূর্ব বর্ধমানের রাইগ্রামের হারু ঘড়ুই এবং মেঝিয়ারির কুমার ভানুর মত দু’জন অপেশাদার যাত্রা শিল্পীর হাতে ভাতা তুলে দেওয়া হয়। জানা যাচ্ছে যতদিন পর্যন্ত এরা সরকারি ভাতা পাবেনা ততদিন তাদের এই ভাতা দেওয়া হবে। আগামীদিনে আরও কয়েকজন শিল্পীর হাতে ভাতা তুলে দেওয়া হবে। ভাতা পাওয়ার পর আবেগে দুই শিল্পীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত অতীত দিনের মঙ্গলকোটের শ্যামবাজারের বিশিষ্ট যাত্রাশিল্পী প্রয়াত রবীন্দ্রনাথ ঘোষের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় । তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সভাপতি মৃন্ময় চক্রবর্তী ও সম্পাদক হিমাদ্রি চক্রবর্তী সহ অন্যান্য সদস্যরা এবং বেশ কয়েকজন যাত্রাপ্রেমী মানুষ। তারা প্রত্যেকেই সংস্থার এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মঙ্গলকোট সহ পার্শ্ববর্তী ব্লকের অপেশাদার যাত্রা শিল্পীদের একই ছাতার তলায় এনে গ্রামীণ যাত্রাশিল্পের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘আমরা যাত্রা ভালবাসি’ কমিটির সভাপতি মৃন্ময় চক্রবর্তী গত কয়েকবছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তার এই প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে ভাল্যগ্রাম পূর্বপাড়া অন্নপূর্ণা সংঘের সভাপতি অসীম চৌধুরী, সদস্য মানিক চৌধুরীর উপস্থিতিতে তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তার হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রয়াত যাত্রাশিল্পী ‘জ্ঞানগোপাল মন্ডল’ স্মৃতি স্মারক। পাশাপাশি সময়পুর নিউ সঙ্গম নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য রাজবল্লভ কোনারও মৃন্ময় চক্রবর্তীকে সম্মাননা জানান। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মৃন্ময় বাবু বলেন, এই সম্মাননা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি সদস্যের মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। আমাদের আশা সবার মিলিত প্রচেষ্টায় অপেশাদার যাত্রা আবার তার অতীত গৌরব ফিরে পাবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments