eaibanglai
Homeএই বাংলায়৩১ ডিসেম্বর থেকে চতুরঙ্গ মাঠে মোচ্ছব চিরতরে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল এডিডিএ

৩১ ডিসেম্বর থেকে চতুরঙ্গ মাঠে মোচ্ছব চিরতরে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল এডিডিএ

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- যখন তখন, যাকে তাকে, যেমন তেমন করে আর মাঠ ভাড়া নয়!

শহর দুর্গাপুরে গত কয়েক বছর ধরে ‘হুল্লোড়- হুল্লাবাজি’র সাধের বৃন্দাবন চতুরঙ্গ ময়দান নিয়ে এবার এমনই চরম সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)। গত শুক্রবারের বোর্ড মিটিং-এ সংস্থার পরিচালন কমিটির বরিষ্ঠ সদস্যরা চতুরঙ্গ মাঠ প্রসঙ্গে হেস্ত-নেস্ত কিছু একটা করার বিষয়ে কার্যতঃ একমত হওয়ার পরই সংস্থার আধিকারিকদের এই মর্মে নির্দেশও দিয়ে দেওয়া হয়েছে, বলে সংস্থার পদস্থ একটি সূত্র জানিয়েছে।

দুর্গাপুর শহরের হৃৎপিণ্ড সিটি সেন্টারের নন্ কোম্পানি পাড়ার এই চতুরঙ্গ ময়দানটি বিগত কয়েক বছর যাবত তামাম শহরের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরপর গণেশ পুজো, দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো থেকে শুরু করে একসময় আইপিএল লাইভ, একটি খাবারের মেলা, সরকারি খাদি মেলা, কিছু হুজুগে লোকের গান মেলা, হস্তশিল্প মেলা আর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো একটি রথযাত্রা উৎসব-এসবে এমনিতেই মাঠটি ভরে থাকে সারা বছর। এবছর থেকে আবার নতুন ব্যারাম অনুকুল ঠাকুরের ভক্তদের ধৃতি সজ্জনি মহোৎসব মাঠটি দখল করে রাখল টানা ২০ দিন। দুর্গাপুজোর জন্য প্রায় দেড় মাস খেলার মাঠটি বেদখল থাকে। ইস্কনের রথযাত্রা কব্জা করে প্রায় চল্লিশ দিন।

“আমরা হিসেব কষে দেখেছি বছরের ৭ মাস চতুরঙ্গ মাঠ বহিরাগতদের কব্জায় থাকে। গোটা মাঠ জুড়ে চলে স্বেচ্ছাচার। এখানকার বাসিন্দাদের- বিশেষতঃ বয়স্ক মানুষ আর ছাত্রছাত্রী, পরীক্ষার্থীরা এইসব হই-হুল্লোড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বারবার বলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এবার যদি এডিডিএ’র চেতনা ফেরে, ভালো হয়,” বললেন এখানকার বরিষ্ঠ নাগরিক কমিটির সভাপতি পীযূষ মজুমদার। তার কথায়, “দুর্গাপুজোর বিসর্জনের পরও মাঠ জুড়ে পড়েই রইল মাটির বাড়ীর প্যান্ডেল প্রায় এক মাস। ফের মাঠ বেদখল হল ধৃতি সজ্জনি মহোৎসবে। মাঝে মাঝে মনেই হয়- এখানে কি কোনো প্রশাসন নেই? একটা খেলার মাঠ ঘিরে বারবার এমন মোচ্ছব হবে – আর সবাই চুপচাপ দেখবে?” পীযূষ নিজে একটি ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালিয়ে আসছেন মাঠের একটি প্রান্তে, গত কয়েক বছর ধরে। সেখানে রাজ্য সরকারের ক্রীড়া যুব কল্যাণ দপ্তর কয়েক বছরে তিন লক্ষ টাকা অনুদানও দিয়েছে। তবে, মাঠটিকে ঘিরে ফুটবল খেলার মানোন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। অর্থাৎ, একটিমাত্র মাঠে খেলাধুলার মানোন্নয়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইতিমধ্যেই ৮ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। অথচ সেই মাঠটিতেই বছরে ৭ মাস বাঁশের খুঁটি, মাটির রাজবাড়ি, কাপড়, প্লাস্টিক, ফাইবারের প্যান্ডেল, আর খেলার মাঠের সারা শরীর জুড়ে জায়গায় জায়গায় গভীর গর্তের ক্ষত! এখানকার নন্ কোম্পানি রিক্রিয়েশন ক্লাবের সম্পাদক বিপ্লব চৌধুরী বললেন, “আমরা অসহায়। কিছুই করার নেই। শুধু বসে বসে দেখি- কিভাবে আমাদের কচিকাঁচাদের খেলার মাঠে বছরভর মোচ্ছব চলছে।” তিনি আরো বলেন, “পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোচিং করতে কখনো পাশের কলা বাগান বস্তির মাঠ, কখনো ওপাশে এখানকার একটি স্কুলের মাঠে নিয়ে যাই। কি আর করব বলুন?” গত ৮ নভেম্বর ফুটবল কোচিং এর কচিকাচাদের নিয়ে লাগাতার মাঠ বেদখলের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিও করে। তবে, তাতে ‘রাজনীতির গন্ধ’ আছে – এই অভিযোগ তুলে আসল সমস্যাটি ধামাচাপা দিতে উদ্যত হয় এডিডিএ’র এক শ্রেণীর আমলা ও মনোনীত সদস্য।

এডিডিএ’র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিপ্লব চৌধুরীর আক্ষেপ, ” বারবার এডিডিএকে বলেছি, মহকুমা শাসককে বলেছি। মহকুমা শাসক একবার ফোনও করেন, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি।”

তবে, সম্ভবতঃ এবার ‘লাভের লাভ’একটা কিছু হতে যাচ্ছে। এডিডিএ সূত্রেই জানা যাচ্ছে- “এভাবে আর যখন তখন, যাকে তাকে চতুরঙ্গ মাঠ ভাড়া দেওয়া হবে না।”

চতুরঙ্গ মাঠটির মালিক আদতে এডিডিএ। গোড়ায় সেখানে একটি মার্কেট কম্প্লেক্সের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল এডিডিএ। তবে, অজানা কারনে পিছু হঠে এডিডিএ। উল্লখ্য, এডিডিএ’র ভাইস চেয়ারম্যানের পদে এখন আবার শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, নন কোম্পানিই বাসিন্দা কবি দত্ত। তিনিই আবার চতুরঙ্গ পুজো কমিটির সভাপতি এবং রিক্রিয়েশন ক্লাবের‌ও বরিষ্ঠ একজন কর্তা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “সমস্যার কথা বিবেচনা করে আমরা এবার সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছি। এডিডিএ সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকে এই মাঠে সরকারি অনুষ্ঠান এবং দুর্গাপুজো ছাড়া আর অন্য কোন উৎসব, অনুষ্ঠান করা যাবে না। এডিডিএ আর যেমন তেমন করে মাঠটি আর কাউকেই ভাড়া দেবে না।” তিনি আরো বলেন, “আমরা গোটা মাঠটি স্থায়ী পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলারও প্রস্তাব করেছি। এডিডিএ’র আর্থিক স্বচ্ছলতা বিবেচনা করেই সেই কাজটি ধীরে ধীরে করা হবে। পাশাপাশি, ওই মাঠে বহিরাগতদের ‘অবাধ’ গতি রুখতে আমি নিজে ইতিমধ্যেই পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের সাথে মাঝে মাঝে রেইড্ করারও প্রস্তাব দিয়েছি।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments