সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- আমরা সবসময় ভাবি যে, আমরা ভগবানকে আরাধনা করি কারণ আমরা তার থেকে কিছু চাই কিন্তু এই কথা সম্পূর্ণ অর্থে সত্য নয়। ভগবানও আমাদের থেকে অনেক কিছু চেয়ে থাকেন। এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা বলি।
একবার নারদ মুনি শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছেন। কিন্তু নারদ মুনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে পৌঁছতে পারলেন না কারণ তিনি দ্বারে প্রবেশ করবাল সময় দ্বারপাল ওনার রাস্তায় বাধা দিলেন। নারদ মুনি তখন এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন – উওর আসলো “প্রভু এখন আরাধনায় ব্যস্ত আছেন।”
নারদ মুনি এই কথা শুনে তখন বললেন-“রাস্তা ছেড়ে দাও,তোমার এই সব কথা আমি বিশ্বাস করি না।”
দ্বারপাল বললো,“ না না মুনিবর,আপনাকে প্রতীক্ষা করতে হবে।”
কিছুক্ষণ পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই কপাট খুললেন। এরপর নারদ মুনি প্রথমে প্রনাম করলেন আর তারপর অভিযোগ করে বললেন -“দেখুন না প্রভু , আপনার দ্বারপাল একটি অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছিল , বলছিল যে আপনি নাকি পূজা করছেন।”
শ্রীকৃষ্ণ এই কথা শুনে মুচকি হেসে বললেন-“এটা সত্যবচন নারদ,আমি আরাধনাতেই মগ্ন ছিলাম।”
নারদ মুনি বললেন-“ভগবান!আপনি আর আরাধনা ?”
শ্রীকৃষ্ণ বললেন-“দেখতে চাও আমি কার আরাধনায় মগ্ন ছিলাম? আসো ভিতরে আসো।”
এরপর নারদ মুনি ভিতরে গিয়ে দেখলেন যে, ভিতরে এক পুষ্পমন্ডিত পালনে অনেক ছোট ছোট প্রতিমা ঝুলছিল। নারদ মুনি একাগ্র দৃষ্টিতে দেখছিলেন। কিছু প্রতিমা গোকুলের গোপ-মন্ডলীর ছিল আর কিছু স্বয়ং ওনার নিজের।
তখন নারদ মুনি প্রভুর দিকে দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, “আরাধ্য আরাধকের আরাধনা কবে থেকে শুরু হলো ? ভক্ত প্রার্থনা করে আর ভগবান কৃপা করেন, এই পর্যন্তই তো জানি। তাহলে এই পরম্পরা আপনি কবে থেকে শুরু করলেন ?”
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন বললেন,“আমাকে বলো নারদ ,ভক্ত আমার আরাধনা কেন করে? কি প্রয়োজনে তারা আমার উপাসনা করে?”
নারদ মুনি বললেন-“প্রভু! তারা আপনার প্রেম চায়।”
শ্রীকৃষ্ণ তখন বললেন,“নারদ! ঠিক সেই প্রয়োজনে আমিও আমার ভক্তের আরাধনা করি। আমিও আমার ভক্তের কাছ থেকে প্রেমের আকাঙ্খা রাখি। ভক্তের কাছ থেকে তাদের প্রেম খুঁজি। প্রেমের এই মহাদান পাওয়ার জন্যই আমি নিরাকার থেকে সাকার হয়ে এই পৃথিবীতে বারবার আসি কিন্তু মানব এই কথাটাই বুঝতে পারে না। তারা তো আমার কাছ থেকে কেবল ধন-দৌলতই চায় ,যেখানে আমি ভক্তের প্রেম পাওয়ার জন্য তাদের দিকে চেয়ে থাকি।”