নিউজ ডেস্কঃ সময় বদলেছে, বদলেছে আমাদের জীবনশৈলীও। সেই সঙ্গে বদলেছে আমাদের খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার ধরণও। বর্তমান সময়ে বাড়িতে বসে নিজের স্মার্টফোনে আলতো টাচেই বাড়ির দোরগোড়ায় নিজের মনপসন্দ হোটেল বা রেস্তোরাঁর মনপসন্দ খাবার কিংবা অনলাইন সামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে হাতের নাগালে। এমনই যখন সুবিধা তখন আর ঘরে রান্নাবান্না করার ঝক্কি বা বাজারে গিয়ে জিনিস কেনার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কেউই। তাই কৌতুহলী চ্যানেল এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালের প্রতিনিধিরাও গত কয়েকদিন ধরে এমনই সব বিভিন্ন সংস্থায় ঘুরে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। আর সেই পরিদর্শনেই উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য ও প্রশ্ন। ডোমিনোজ, পিৎজা হাট, সুইগি, অ্যামাজন, স্ন্যাপডিল বা সম্প্রতি জনপ্রিয় জোম্যাটো নামক এইধরনের সংস্থাগুলি বর্তমানে শহরজুড়ে জাকিয়ে তাদের ব্যবসা করে চলেছে। এইসব সংস্থার কাজ হল, অনলাইন মারফৎ ক্রেতাদের অর্ডার করা খাবার বা জিনিস নির্দিস্ট সময়ে তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া। আর এই খাবার বা প্যাকেজ পৌঁছে দেওয়ার জন্য এইসব সংস্থাগুলি ব্যবহার করে নিজেদের সংস্থার লোগো লাগানো বেকার যুবকদের মোটর বাইকগুলি। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। কারণ এইধরনের খাবার বা অনলাইন সামগ্রী পরিবেশনকারী সংস্থাগুলি তাদের ব্যবসায়িক কার্যসিদ্ধির জন্য দিনের পর দিন ধরে ব্যবহার করে চলেছেন এই বেকার যুবকদের মোটর বাইকগুলি। কিন্তু কোনও ব্যবসায়িক কাজে এভাবে মোটর বাইকগুলি ব্যবহার করার কোনও অনুমোদন কী সরকারী তরফে তাদের আছে? উত্তর হল “নেই”। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এইসমস্ত সংস্থাগুলি দিনের পর দিন এই বাইকগুলিকেই ব্যবসায়িক কাজে লাগিয়ে মুনাফা কামিয়ে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের নামে তাদের পরিবারের কস্টার্জিত টাকায় কেনা মোটর বাইকগুলিকে দিনের পর দিন ব্যবসায়িক কারণে ব্যবহার করছে এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলি। শুধু তাই নয়, এমন একাধিক সংস্থা রয়েছে যাদের কড়া নিয়ম হল ক্রেতার অর্ডারের আধা ঘন্টার মধ্যে সেই খাবার তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া চায়, না পারলে ক্রেতাকে বিনামূল্যে সেই খাবার সংস্থার তরফে তুলে দেওয়া হবে। আর সংস্থার এই নির্দেশ পালন করতে এবং নিজের চাকরি ও জীবন বাঁচাতে শহরের জনবহুল এলাকাগুলিতেও ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন সংস্থার নিয়োগ করা পশ্চিমবঙ্গের বেকার যুবক এই ডেলিভারী বয়েরা। ফলে শহরের ভিড় প্রবণ এলাকাগুলিতে একাধিক বার ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে নিজের কর্মীদের জীবন নিয়ে যেমন ছিনিমিনি খেলা চলছে তেমনি শহরের সাধারণ মানুষের কাছেও ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে এই ঘটনা। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে পুলিশ প্রশাসন এই বেপরোয়া কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কেনও পদক্ষেপ করছে না? এখানে বলে রাখা ভাল, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মোটরভেহিক্যাল আইনে ব্যবসায়িক কাজে দু-চাকা গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে কোনও রকম নির্দিস্ট আইনি নিসেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ নেই। পাশাপাশি এইসমস্ত গাড়িগুলিতে এমনভাবে সংস্থার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে যা দূর থেকেও সহজেই বোঝা যায়। তাই শহরের বিভিন্ন চেকিং পয়েন্টগুলিতেও এই বাইকগুলির কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা হচ্ছে না। কিন্তু দুর্গাপুর থেকে মাত্র ১৭০ কিলোমিটার দূর কলকাতায় কিছুদিন আগেই যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে বাইক ট্যাক্সি চালু করা হয়েছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এই বাইকগুলি ব্যবহার করার কারনে ওই সমস্ত বাইক ট্যাক্সিগুলিকে হলুদ নম্বর প্লেট দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাহলে এইসমস্ত অনলাইন খাবার ও দৈনন্দিন ব্যবহৃত সামগ্রী বিক্রয়কারী সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেও কেন এই নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে না? এই বিষয়ে চ্যানেল এই বাংলায়-র তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল আরটিও বিভাগের এক আধিকারিকের সঙ্গে। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত শহরাঞ্চলে এই সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহৃত দু-চাকা গাড়িগুলির ক্ষেত্রে কোনও বিধি-নিয়ম কার্যকর নেই, তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিকভাবে আলোচনা হয়েছে, এবং দ্রুত এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বভাবতই প্রশ্ন রয়েই গেল এই বাণিজ্যিক কারনে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলগুলি থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা তার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্য সরকার তথা কেন্দ্র সরকার। অন্যদিকে আইনি বিধিনিষেধের ফাঁক ফোকর দিয়ে গলে যাওয়া ওই সংস্থাগুলি সরকারী রাজস্ব ও ওই সমস্ত বেকার যুবক-যুবতীদের গাড়ি ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের মুনাফা লাভ করছেন। অবিলম্বে এই বিষয়ে রাজ্য সরকার তথা কেন্দ্র সরকার কী পদক্ষেপ নেন সেটাই এখন দেখার।
দু-চাকাওয়ালা অনলাইন ডেলিভারী বয়রা কি ফাঁকি দিচ্ছেন সরকারী রাজস্বে?
RELATED ARTICLES