সংবাদদাতা,আসানসোলঃ– রাজ্যের প্রচীন দেবীপিঠ গুলির মধ্যে অন্যতম বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্তের কল্যানেশ্বরী দেবীপিঠ। আর এই দেবীপিঠ ঘিরে রয়েছে ঐতিহাসিক এবং অলৌকিক সব গল্পগাঁথা।
কথিত আছে মা কল্যাণেশ্বরী ভক্তদের সকল দুঃখ-বেদনা দূর করেন। বাংলা ও ঝাড়খণ্ড দুই রাজ্যের ভক্তরাই তাঁদের মনস্কামনা নিয়ে মায়ের দর্শনে পৌঁছন বাংলার হ্যাংলা পাহাড়ে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন কল্যাণেশ্বরী মাতার মন্দিরে। জনশ্রুতি আছে, কুষাণদের তাড়া খেয়ে ৩ শতকে হরিগুপ্ত পালিয়ে এসে রাজ্য গড়েন হ্যাংলা পাহাড়ে। মন্দিরও গড়েন তিনি। তবে, এখনকার মন্দিরটি পঞ্চকোটের রাজার তৈরি। অতীতে নরবলির প্রথাও ছিল দেবীর থানে।
বর্তমান যে দেবী কল্যানেশ্বরীর মন্দির রয়েছে তার থেকে বেশ কিছুটা দুরে রয়েছে প্রাচীন মন্দিরটি। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে শবনপুর এলাকায়। মন্দিরের প্রধান সেবাইত দিলীপ দেওঘরিয়া জানান প্রাচীন মন্দিরেই অধিষ্ঠিতা আছেন দেবী । এখানেই রাজা কল্যাণীপ্রসাদ মা কল্যাণেশ্বরীকে রেখেছিলেন। আর নিয়ে যেতে পারেননি। সে এক রোমাঞ্চকর কাহিনী।
জানা যায় রাজা বল্লাল সেনের পালিতা কন্যার নাম ছিল লক্ষ্মী। লক্ষ্মীর সাথে বিয়ের ঠিক হয় পুরুলিয়ার কাশীপুরের রাজা কল্যাণীপ্রসাদের। বিয়ের যৌতুকে শ্যামারুপার মূর্তি তুলে দেওয়া হয় লক্ষ্মীকে। কল্যাণীপ্রসাদ স্ত্রী লক্ষ্মীকে বিয়ে করে ফিরছিলেন সঙ্গে ছিলেন দেবী শ্যামারুপা। কুলটির স্বপ্নপুর গ্রামের কাছে জঙ্গলে দিকভ্রষ্ট হন তাঁরা। স্বপ্নপুরেরই বর্তমানই নাম শবনপুর। দিকভ্রষ্ট জঙ্গলে মা শ্যামারুপাকে নামিয়ে রেখেছিলেন লক্ষ্মী । কিন্তু পরের দিন সকালে শতচেষ্টাতেও দেবীকে আর মাটি থেকে তোলা সম্ভব হয়নি। পরে শবনপুরের সেই জঙ্গলের মধ্যেই তৈরি হয় শ্যামারুপার মন্দির। কাশীপুরের রাজা কল্যাণীপ্রসাদের নামে যা পরবর্তী কালে কল্যানেশ্বরী হয়ে যায়। এই গল্পের পাশাপাশি আরেকটি অলৌকিক গল্প আছে।
বর্তমান যেখানে মন্দির রয়েছে সেখানে আগে জঙ্গল ছিল। জঙ্গল দিয়ে বয়ে যেত ছোট নদী। সেখানেই এক শাঁখারির কাছে শাখা পড়েন এক বধূ। কিন্তু তিনি টাকা নিতে বলেন কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের সেবাইত দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। শাঁখারি ওই যুবতীকে শাঁখা পরিয়ে চলে যান শবনপুর গ্রামে। সেখানে দেবনাথ বাবুর কাছে গিয়ে শোনেন তিনি নিঃসন্তান। এরপরে দেবনাথবাবু সেই শাঁখারিকে নিয়ে ফের সেই জঙ্গলে নদীর ঘাটে যান। গিয়ে দেখেন সেই যুবতী আর নেই। তবে পাথরে পায়ের ছাপ দেখতে পান। পরে এখানেই নতুন মন্দিরটি তৈরি হয়। আজও নতুন মন্দিরের পাশে চালনাদহ ঘাটে রয়েছে মায়ের সেই পায়ের ছাপ।
কালীপুজোর রাতে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। আসেন মাকে পুজো দিতে দূর দূরান্ত ছুটে যান ভক্তেরা। সারারাত ধরে চলে মায়ের পুজো। পাশাপাশি দীপাবলির রাতে এই চালনাদহ ঘাটে মোমবাতি, প্রদীপ জ্বালান ভক্তরা।