জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- নমস্য আমাদের দেশের নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী। একদল সীমান্ত পাহারা দিয়ে বহিঃশত্রুর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে চলেছে। এরা হলো আমাদের বীরত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীর জওয়ান এবং পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত। মূলত এদের জন্যই দেশের মানুষ আজ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। যেভাবে পরিবারের থেকে দূরে থেকে এরা দেশকে রক্ষা করে চলেছে তাতে কোনো প্রশংসা যথেষ্ট নয়।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পরেও রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হতে পারলনা আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দেওয়া এই দেশের পুলিশ বাহিনী। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শাসকদলের নির্দেশ তারা কার্যত পালন করতে বাধ্য হয়। দিনের শেষে তাদের পরিচয় হয় দলদাস। অথচ আজ পর্যন্ত কোনো শাসকদল তাদের রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত রাখার চেষ্টা করেনি। ইংরেজরা মূলত স্বাধীনতা বিপ্লবীদের দমন করার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করেছিল। বর্তমান যুগে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের দমন করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে চলেছে শাসকদল। গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশরাজ কাম্য না হলেও পুলিশ বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখার একটা চেষ্টা করতে হবে।
এই রাজ্যের কথা ভাবা যাক। অনেক প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক টিভি চ্যানেলের সান্ধ্য আলোচনায় বারবার দাবি করেন বাম আমলে নাকি তাদের কোনো রাজনৈতিক চাপ সহ্য করতে হয়নি। তাদের কাছে ছোট্ট জিজ্ঞাসা বাম আমলের চৌত্রিশ বছরে যে একাধিক গণহত্যার ঘটনা ঘটল তার জন্য তারা কতজনকে গ্রেপ্তার করেছিল অথবা সেগুলো কেন তারা রোধ করতে পারেনি? অথবা নন্দীগ্রামে মুখে কাপড় ঢাকা ও চটিপড়া পুলিশের (!) গুলি চালনা, ১৯৯৩ সালের ২১ শে জুলাই রক্তাক্ত কলকাতা ও তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রীকে কার্যত খুনের চেষ্টা করার ঘটনায় কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল? কে ঘটিয়েছিলর থেকেও বড় সত্য ঘটনাগুলো ঘটেছিল। এরকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। চরম ব্যর্থ সেইসব প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকরা কত সহজেই তাদের উত্তরসুরীর দিকে আজ অভিযোগের আঙুল তুলছেন। আজকের মত সেদিন যদি অসংখ্য মিডিয়া হাউস বা সোশ্যাল মিডিয়া থাকত তাহলে প্রতিদিন দ্যাখা যেত প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে কিভাবে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছে। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে গ্যাছে। বাম নেতাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিরোধীদলের নেতারা কি থানায় অভিযোগ জানাতে পারত?
বাম আমলের ঐতিহ্য একটু মোটা দাগে বহন করে চলেছে তৃণমূল আমল। সেই শাসকদলের চাপ। এখন অবশ্যই সবচেয়ে বড় সংযোজন ‘গাঁজা কেস’। এটা ঠিক এখন পুলিশের জনসংযোগ অনেক বেড়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের জন্য এলাকা মোটামুটি শান্ত। বগটুই ছাড়া গণহত্যার ঘটনার কথা শোনা যায়নি। ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতার জন্য ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। তারপরও শাসকদলের বদান্যতায় অনেকেই মিথ্যা মামলায় জেলে গ্যাছে। কি লাভ হয় একজনের সংসারকে এভাবে ভাসিয়ে দিয়ে ?
অথচ করোনার সময় সবাই যখন মৃত্যু ভয়ে গৃহবন্দী তখন এই পুলিশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গ্যাছে। আক্রান্তের বাড়িতে ওষুধ ও খাবার পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে রক্তদান পর্যন্ত করে গ্যাছে। ওদিকে বাড়িতে তখন পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। সবাই যখন নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দে মত্ত ওরা তখন রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যস্ত। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তারজন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় থেকেছে। শুধু তাই নয় সমাজসচেতনার কাজেও পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
অনেকে বলেন এটা ওদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তার জন্য বেতন পায়। অন্য সরকারি কর্মচারীরাও তো বেতন পায়। তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করে সেটা ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে দীর্ঘ লাইন দেখলেই বোঝা যায়। বিধায়ক-মন্ত্রীরা কতটা দায়িত্ব পালন করে সেটা রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়।
সব পেশার মত পুলিশের পেশাতেও নিশ্চয়ই কিছু অসৎ লোক আছে। এক শ্রেণির পুলিশ রাস্তায় টাকা তোলে। ঘুষ নেয়। এটা সমর্থন না করেও বলা যায় সরকারি অফিসে কিন্তু প্রচুর ঘুষ নেওয়ার লোক দেখতে পাওয়া যাবে।
পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার আগে শাসক ও বিরোধীদলগুলো কবে তাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বাইরে আনার চেষ্টা করবে সেই অপেক্ষায় এই দেশের সাধারণ মানুষরা হয়তো অপেক্ষায় আছে। সত্যিই কি রাজনৈতিক দলগুলো সদিচ্ছা দ্যখাতে পারবে?
![](https://www.eaibanglai.com/wp-content/uploads/2022/10/banglow-49-1024x576.gif)
![](https://www.eaibanglai.com/wp-content/uploads/2022/10/kajol-2-1024x576.gif)
![](https://www.eaibanglai.com/wp-content/uploads/2022/10/banglow2-2-1024x576.gif)
![](https://www.eaibanglai.com/wp-content/uploads/2022/10/naari-2-1024x576.gif)