eaibanglai
Homeউত্তর বাংলারেডিওর কি স্থান পেতে চলেছে ইতিহাসের পাতায়!

রেডিওর কি স্থান পেতে চলেছে ইতিহাসের পাতায়!

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- মাঝে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রাত পার হলেই ভোরবেলায় ইথার তরঙ্গের মাধ্যমে বেতারে ভেসে আসবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের আবেগ ও ভক্তি মথিত সেই ভাবগম্ভীর কণ্ঠস্বর – যা দেবী সর্বভূতেষু…. আপামর বাঙালি মুগ্ধ হয়ে ভক্তিভরে সেই চণ্ডীপাঠ শোনার জন্য বসে থাকবে বেতারের সামনে। একটু পর শুরু হবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’।

অন্য সময় অবহেলায় পড়ে থাকলেও মহালয়ার দিন বেতার যন্ত্র অর্থাৎ রেডিওতে নুন্যতম গণ্ডগোল হলে চলবেনা। ব্যাটারি সহ রেডিওর সব ঠিক আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হতো রেডিও সারানোর দোকানে। শহর থেকে শুরু করে পাড়ার মোড় – প্রতিটি দোকানে রেডিও মিস্ত্রিদের তখন চরম ব্যস্ততা। কার্যত অন্য কাজ করার ফুরসৎ থাকেনা। দিনরাত তারা ব্যস্ত থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে রেডিও সারিয়ে ফেরত দিতে হবে। নাহলেই অশান্তি!

এসব এখন অতীত। প্রযুক্তির হাত ধরে ততদিনে বাজারে এসে গেছে টিভি। অডিওর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পেয়ে গেছে ভিস্যুয়ালের স্বাদ। যতদিন গেছে কেবল টিভির হাত ধরে একের পর এক নিত্য নতুন চ্যানেল পৌঁছে গেছে ড্রয়িং রুমে। সিরিয়ালের সৌজন্যে বাড়ির মহিলাদের মধ্যে পেয়ে গেছে একদল নতুন দর্শক। ধীরে ধীরে রেডিও তার অতীত কৌলিন্য ও মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে মহালয়ার প্রায় দু’মাস আগে থেকে যেসব রেডিওর দোকানে চরম ব্যস্ততা থাকত তাদের অধিকাংশ আজ বন্ধ হয়ে গেছে।

সংখ্যায় কম হলেও দেবকী মুখার্জ্জী বা সুশান্ত ব্যানার্জ্জীর মত প্রবীণ ব্যক্তি আজও আছেন। রেডিও এদের কাছে অক্সিজেন স্বরূপ। এদের সৌজন্যে আজও টিকে আছে কিছু রেডিওর দোকান।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুশান্ত বাবু বললেন- কি করে ভুলি রেডিওর কদর! ভোরবেলায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনার মধ্যে যে ভাব আসে টিভিতে সেটা পাওয়া যায় কিনা জানিনা। নস্টালজিক হয়ে পড়লেন তিনি।

পাশে রেডিওতে গান চালিয়ে টিভি সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত দেবকী বাবুর কণ্ঠে একইসুর শোনা গেল। আজও রেডিও তার জীবন। তিনি বললেন – রেডিওতে চণ্ডীপাঠ শোনার আনন্দটাই আলাদা। বছর পঁচিশ আগেও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নিয়ে যখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ আনন্দ লাগত। ধীরে ধীরে সব বদলে গেল। একরাশ বিষণ্নতা গ্রাস করল তাকে।

অন্যদিকে গুসকরা এলাকার সুপরিচিত দীর্ঘদিনের রেডিও মিস্ত্রি সুপ্রভাত চ্যাটার্জ্জী বললেন – একটা সময় মহালয়ার আগে প্রায় সারারাত ধরে কাজ করতে হয়েছে। এখন কাজ অনেক কমে গেছে। সারাদিনে হয়তো দু-একটা। কিছু প্রবীণ ব্যক্তি আজও রেডিও ব্যবহার করেন বলে তাও মাঝে মাঝে কিছু রেডিও সারানোর সুযোগ পাই। নাহলে সারাদিন টিভি সারাতেই ব্যস্ত থাকি। আর এক রেডিও মিস্ত্রি অশোক দাস একই কথা শোনালেন।

পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে হয়তো আগামী দিনে বিজ্ঞানের চমকপ্রদ আবিস্কার রেডিওর স্থান হবে যাদুঘরে। রেডিও মিস্ত্রিদের বেছে নিতে হবে বিকল্প কাজ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments