eaibanglai
Homeএই বাংলায়ক্ষুদিরাম মাঝি, এ এক অন্য শিক্ষকের গল্প

ক্ষুদিরাম মাঝি, এ এক অন্য শিক্ষকের গল্প

সংবাদদাতা,বাঁকুড়া:– ক্ষুদিরাম মাঝি, বয়স ৯৩ বছর। সেই ১৯৩০ সালে জন্ম। বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়েছেন এখন। ঠিক করে শুনতে পাননা, কথা বলতেও কষ্ট হয়। তবুও অতি সাধারণ আজীবন শিক্ষাকতা করা এই ক্ষুদিরাম মাঝিই মনের মণি কোঠায় রয়ে গেছেন অনেকে ছাত্র ছাত্রীর মনে, তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতার জন্য।

দরিদ্র পরিবারের ক্ষুদিরাম মাঝি তৎকালীন সময়ে অনেক কষ্ট করে ম্যাট্রিক পাশ করেন ও শিক্ষকতা শুরু করেন। বাঁকুড়ার ইন্দাসের সাঁপুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সারা জীবন পড়িয়েছেন। আর তার আড়ম্বরহীন, মানবিক জীবন যাপন এখনও দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। পোশাক আশাকে শৌখিনতা তো দূরের কথা জলকাদা পেরিয়ে খালি পায়েই যাতায়াত করতেন মাস্টার মশাই। চটি জুতোও পড়তেন না কোনোদিন । তবে শেষে দিকে নাকি কয়েক বছর চটি পড়ে স্কুলে যেতেন। মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকতা করতেন। ওই টাকায় সংসার চলতো না, তবুও পড়ুয়াদের টিউশন পড়ানোর জন্য কোনও দিন এক পয়সাও নেননি বলে জানাচ্ছেন তাঁর ছাত্ররা। এমনকি ওই মাইনেতেই বরাবর অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। পেশাগত ও ব্যক্তি জীবনে প্রাপ্তির থেকে সংঘর্ষই ছিল বেশী, কিন্তু তার প্রভাব পড়েননি কর্তব্য নিষ্ঠায়। তাঁর ছাত্র এবং প্রাক্তন শিক্ষক ৭৬ বছর বয়সী অজিত কুমার বেজ জানান, স্যারের পড়ানোর তুলনা হয়না। শাসন থাকলেও ভালোবেসে যত্ন নিয়ে সকলকে পড়াতেন। কোনো বিষয় পড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরখ করে দেখে নিতেন ছাত্ররা সঠিক শিখেছে কিনা।

এরকম শিক্ষকের কথা গল্প কথায় শোনা গেলেও বাস্তবে দেখা মেলা ভার। বর্তমান সময়ে শিক্ষকরা পেশাগতদিক থেকে অনেরটাই এগিয়ে। সরকারী চাকুরিজীবি হিসেবে মেলে অনেক সুযোগ সুবিধা। এমনকি যে কোনও ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ নানা সম্মান। সম্মান স্বীকৃতি না মিললেও লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে যাওয়া এই সব ক্ষুদিরাম মাঝিরা যে আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে মানুষ গড়ে তুলেছেন তা ভোলার নয়। তাঁদের মতো শিক্ষকদের হাতে তৈরি হওয়া ছাত্ররাই আজ নানা অবদানের মধ্যে দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাই এই শিক্ষক দিবসে ক্ষুদিরাম মাঝির মতো পাদপ্রদীপের আড়ালে থেকে সমাজ তথা মানুষ গড়ার এই কারিগরদের কুর্ণিশ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments