eaibanglai
Homeএই বাংলায়চন্ডীদাস বাজারের চুরির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করল ডিএসপি, অন্ধকারে ডুবে চন্ডিদাস বাজার

চন্ডীদাস বাজারের চুরির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করল ডিএসপি, অন্ধকারে ডুবে চন্ডিদাস বাজার

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের বুকে একাধিক জায়গায় জবরদখল করে কয়েক দশক ধরে গড়ে উঠেছে দোকান,গুমটি,বাজার সহ অবৈধ বাড়ি ঘরদোর। দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের জমি দখলের এই প্রবণতা দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। একাধিকবার ইস্পাত কর্তৃপক্ষ জবরদখল উচ্ছেদ অভিযানে নামলেও সাফল্যের নামে কাজের কাজ কিছুই হয় না। ইস্পাত কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারি অভিযান চালানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই আবার গড়ে ওঠে দোকান,গুমটি ,বাড়ি,গ্যারেজ সহ আস্ত একটা বাজারও। অনেকেরই প্রশ্ন তাহলে কি দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের একশ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার কারণেই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ? এমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইল ইস্পাত নগরী।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোনের সব থেকে বড় বাজার ডাঃ বি সি রায় মার্কেট যাকে লোকে চন্ডীদাস বাজার বলে জানে, সেখানে হঠাৎই সি.আই.এস.এফের জওয়ানদের নিয়ে ইস্পাত কর্তৃপক্ষের একাধিক আধিকারিক হাজির হয় এবং বাজারের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। দুটি ছোটা হাতি লরিতে ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারী তার ও সরঞ্জাম। কিন্তু ইস্পাত নগরীর বসবাসকারী বাসিন্দাদের অভিযোগ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কিছুক্ষণ পরেই ইস্পাত কর্তৃপক্ষের ঠিকা বিদ্যুৎ কর্মীরা মোটা টাকার বিনিময়ে আবার অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ জুড়ে দেন। বাজারটিতে কয়েক দশক ধরে যা হয়ে এসেছে এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে বলে স্থানীয় ইস্পাত নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ।

উল্লেখ্য, দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোন এলাকায় কয়েক দশক ধরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে চন্ডীদাস বাজার এলাকাটি। প্রায় হাজার খানেক বিভিন্ন রকমের দোকানের পসরা নিয়ে এখানে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের বহুবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও দিনের পর দিন দোকানের সংখ্যা ও চুরি করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে দোকান চালানোর প্রবণতা বাড়তেই থাকে। ২০২১ সালে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় কোঅপারেটিভ সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়। তারপর থেকে এখনো অব্দি ব্যবসায়ী সমিতির নিজস্ব গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফলে নতুন করে নির্বাচিত কমিটি তৈরি হয়নি। যত্রতত্র যে যার মতো করে ব্যবসায়ীরা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সাথে তাদের দোকানের তার সোজাসুজি যোগ করে বিদ্যুৎ চুরি করা শুরু করেন। দেখতে দেখতে হাজার খানেক দোকান বিশিষ্ট এই চন্ডীদাস বাজারটি সম্পূর্ণরূপে চুরির বিদ্যুতে চলতে থাকে। বহুবার ইস্পাত কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করলেও, কে কার কথা শোনে। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশাল সিআইএসএফ বাহিনী ও আধিকারিকদের এক দল দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোনে অবস্থিত চন্ডীদাস বাজারে সমস্ত দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগকারী তার বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অন্ধকারে ডুবে যায় প্রায় হাজার খানেক দোকান।

এই অরাজকতা নিয়ে চন্ডীদাস বাজারের প্রাক্তন পরিচালন সমিতির সম্পাদক তপন কুমার পাল বলেন, “২০১০ থেকে ২০২১ অবধি আমি এই সংস্থার সম্পাদক ছিলাম। আমার সময় কালে আমি বহু চেষ্টা করে এবং চন্ডীদাস বাজারের সকল ব্যবসায়ী বন্ধুদের সহযোগিতায় রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ বন্টনকারী সংস্থার দাবি মোতাবেক ৪৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করার কাজে নেমে পড়ি। কিন্তু একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর প্রবল বিরোধের ফলে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হই।” পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “যতদিন পর্যন্ত না আমাদের স্থায়ী পরিচালন সমিতি দায়িত্ব পাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আর নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে আলোচনা করা বৃথা। এখন থেকে আশা করা যায় চন্ডীদাস বাজারের সকল দোকানদার বন্ধুরা জেনারেটরের আলোতেই ভরসা করে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি চালাবেন।”

অন্যদিকে চন্ডীদাস বাজারে প্রায় দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করা এক দোকানদার জয় গোস্বামী বলেন, “এই দোকান থেকেই আমাদের পরিবার চলে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা জেনারেটর এর আলোতে ব্যবসা চালিয়ে আসছি । চন্ডীদাস বাজারের অনেক বন্ধু দোকানদাররা ইস্পাত কর্তৃপক্ষের বিদ্যুৎ নিয়ে ব্যবসা করছিলেন ঠিক, কিন্তু এখন হঠাৎ করে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ এই দুর্ধর্ষ গরমের সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করল তাদের। ফলে তারা এখন অতল জলে তলিয়ে গেলেন। আগামী দিনে যদি এর কোন সুরাহা না হয় তাহলে তাদের পরিবার সমেত আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন, অবিলম্বে বন্ধু দোকানদারদেরকে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও তাদের পরিবারগুলিকে বাঁচান।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments