eaibanglai
Homeএই বাংলায়নেশা মুক্তির মরণ ফাঁদে/১.....কসাইখানার জল্লাদদের জব্দ করতে ধন্দে প্রশাসন

নেশা মুক্তির মরণ ফাঁদে/১…..কসাইখানার জল্লাদদের জব্দ করতে ধন্দে প্রশাসন

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- ড্রাগের নেশা ছাড়াতে দাওয়াই বেদম প্রহার। আর সেই নৃশংস ধোলাই প্রাণ কেড়ে নিল মারণ নেশা থেকে বেঁচে ফিরতে চাওয়া বছর ২৬-র যুবক সুমিত দাসের। তবে, সময়মতো পুরনিগম, স্বাস্থ্য দপ্তর আর পুলিশের সুমতি হলে, হয়তো অন্তত প্রাণে বেঁচে যেত বেনাচিতির সুমিত।

শনিবার শহরের সিটিসেন্টার এলাকায় একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ‘আধমরা’ সুমিতকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কথায়, সুমিতের দেহে জবরদস্ত মারধর করার যথেষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রশ্ন উঠছে- “নেশামুক্তি কেন্দ্রে ওই যুবককে এভাবে মারধর করলো কে বা কারা? কেনই বা মারল? যদি মারলোই, তাহলে নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষই বা কি করছিল?

নেশামুক্তি কেন্দ্রের নামে দুর্গাপুরের আনাচে-কানাচে, এমনকি পশ্ সিটিসেন্টার এলাকাতেও বেপরোয়া ভাবে গজিয়ে উঠেছে আধ ডজন কসাইখানা। সেই কসাইখানাগুলির অন্দরে ‘চিকিৎসক’, ‘শুশ্রুষাকারী’ সেজে যেসব জল্লাদেরা এমন সব মারণ খেলায় উন্মত্ত হয়ে ‘রোগী’দের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে আসছেন, সূত্রের খবর-তারা প্রায় সকলেই একসময়ের কুখ্যাত নেশাড়ী। গঙ্গা জলে স্নান করে, তারাই এখন গঙ্গা পুজোর নামে গুচ্ছগুচ্ছ অসহায় নেশাগ্রস্থের এভাবে গঙ্গা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করছেন অনায়াসে, প্রশাসনের নাকের ডগায় নেশা মুক্তির অবৈধ দোকান খুলে। অভিযোগ, শাসক দলের কিছু নেতা, পুলিশ আর স্বাস্থ্য দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মী এসব কেন্দ্র থেকে মাসোহারাও নাকি পেয়ে থাকেন নিয়মিত। আর এসবের জাঁতাকলে মারণ নেশা থেকে বাঁচতে আশা যুবক-যুবতীরা অকালে মারা যাচ্ছেন বেঘোরে, নয়তোবা তলিয়ে যাচ্ছেন আরো গাঢ় আঁধারের চোরাবালিতে।

বেনাচিতি সুভাষপল্লীর সুমিতের এই করুন পরিণতির পর হুঁশ ফিরেছে দুর্গাপুর নগর নিগমের। অবৈধ এইসব নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলির বেপরোয়া কাজ কারবারে এবার লাগাম টানতে চলেছে পুরনিগম। পুরনিগমের অন্যতম প্রশাসক রাখি তেওয়ারি রবিবার বলেন, “করোনা কালে লকডাউনের সময় এরকম কয়েকটি নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আমরা প্রথম অভিযোগ পাই। ওদেরকে সমনও পাঠানো হয়। তিনটি কেন্দ্রের মালিক তখন আমাদের কাছে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু তারা আদৌ স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনোরকম বৈধ কাগজপত্র আমাদের দেখাতে না পেরে সময় চেয়েছিলেন। এরই মাঝে আমাদের নগর নিগমের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই, ও বিষয়ে আর নতুন করে তত্ত্ব তালাশ করা হয়নি।” রাখি আরো বলেন, “গতকাল সিটিসেন্টারের একটি কেন্দ্রে নৃশংস মৃত্যুর ঘটনায় আমরা ফের বিষয়টিতে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করছি। আগামীকালই পুরনিগমের মুখ্য প্রশাসকের সাথে একটি বৈঠক হবে। তারপর ব্যবস্থা গ্রহণের পন্থা ঠিক করা হবে শীঘ্রই।”

দেড় বছর আগে ‘এই বাংলায় ডট কম’ প্রথম শহরের নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলি নিয়ে আলোকপাত করলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শহরের নাগরিক সমাজের একাংশ রবিবার আক্ষেপ করে বলেন, “পুরনিগমের এই লাগাম টানার কসরতের মাঝে দেড়টি বছর সময় না লাগলে, এরকম উদাসীনতা না থাকলে হয়তো এই সুমিতকে এভাবে মারা পড়তে হতো না। এইসব সেন্টার যে পুরোদস্তুর অবৈধ, তা জেনে বুঝেও শহরের প্রশাসকেরা এতটা সময় কেন লাগালেন, তা ভালো করে তদন্ত করা দরকার। এখন এই মৃত্যুর দায় নেবে কে?”

সুমিতের মৃত্যুর পর দুর্গাপুরের মহকুমা প্রশাসন এবার নড়েচড়ে বসেছে। দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত শুরু করেছে। আমরাও পাশাপাশি একটি তদন্ত করবো।” পুলিশ ইতিমধ্যেই সিটিসেন্টারের ওই কেন্দ্রটির মালিক অভিজিৎ ভাওয়ালকে আটক করেছে। কিন্তু, তার বিরুদ্ধে ‘হত্যা’র ধারা এখনো কেন যুক্ত করেনি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শহরের সিটিসেন্টারেই ‘সেপকো’ কলোনিতে এ রকমই একটি ‘কেন্দ্র’ চালানো একটি সংস্থার মালিক বলেন, “ওসব কিছু হবে না। আমাদের সাথে সবার সেটিং আছে। দুদিন পর সবাই সব ভুলে যাবে। এরকম কত হয়, অনেক কিছুই প্রকাশ্যে আসে না।” আসলে, ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরও প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ায় সম্ভবতঃ ‘বুকের বল’ বেড়ে গেছে কেন্দ্রগুলির কর্তাদের। তবে কি প্রশাসন নিজেই এখনো ধন্দে ?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments