eaibanglai
Homeএই বাংলায়কুলটির ভয়ঙ্করা মা ছিন্নমস্তার মন্দির এখন ভক্তদের কাছে তীর্থক্ষেত্র

কুলটির ভয়ঙ্করা মা ছিন্নমস্তার মন্দির এখন ভক্তদের কাছে তীর্থক্ষেত্র

সংবাদদাতা,আসানসোলঃ– মা ছিন্নমস্তা। আধ্যাত্মিক আত্মোপলব্ধি ও কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণের দেবী। যিনি আবার প্রচণ্ডচণ্ডিকা নামেও পরিচিত। মহাবিদ্যা নামে যে দশ দেবীর পূজা গুহ্য তান্ত্রিক সাধনার অঙ্গ, ছিন্নমস্তা হলেন তাঁদেরই অন্যতম। দেবীর ভয়ঙ্কর রূপ দেখে অনেকেই ভীত হন। যেখানে দেবী যুগলের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দেবীর ডান হাতে খড়গ, যে খড়গ দিয়ে নিজের মুণ্ডচ্ছেদন করেছেন এবং সেই খন্ডিত মুণ্ড বাম হাতে ধরে রয়েছেন। মুণ্ডহীন কন্ঠনালী থেকে ফিনকি দিয়ে বের হচ্ছে তিনটি রক্তের ধারা। সেই রক্তের ধারা পান করছে হাতে ধরে রাখা খণ্ডিত মুণ্ড ও তাঁর দুই সহচরী ডাকিনী ও যোগিনী। তবে এই ভয়ঙ্কর রূপের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে মনুষ্য জীবনের জন্ম-মৃত্যু, ভক্তি মুক্তির অপূর্ব ব্যাখ্যা। এখানে নর-নারী যুগল সৃষ্টি বা জন্ম ও দেবীর মুণ্ডচ্ছেদ মৃত্যুর প্রতীক। অর্থাৎ দেবীর এই রূপের মাধ্যমে জীবনের জন্ম-মৃ্ত্যু চক্রকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া মুণ্ডচ্ছেদর আরও একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। দেবী নিজের মুণ্ডচ্ছেদ করে আসলে নিজের অহংকারকে ছেদ করছেন। হিন্দু মতে মানুষ এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে তখনই মুক্ত হয় যখন সে নিজের ‘অহং’ অর্থাৎ ‘আমি’কে নাশ করে। আর রক্তের তিনটি ধারা আসলে ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না তিনটি নাড়ী। হিন্দু ধর্ম মতে প্রতি জীব দেহে রয়েছে এই নাড়ী যার মধ্যে দিয়েই জীবের অন্তর্নিহিত সুপ্ত শক্তি বা আধ্যাত্মিক শক্তি জাগ্রত হয়।

পশ্চিমবঙ্গে শক্তি তথা দেবী দুর্গা ও কালীর আরাধনা পচলিত থাকলেও ছিন্নমস্তার মন্দিরের সংখ্যা খুবই কম। সর্বজনীনভাবেও তাঁর পূজা বিশেষ করা হয় না। এ রাজ্যে যে কয়টি ছিন্নমস্তার মন্দির আছে তার মধ্যে অন্যতম পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটির সাকতোরিয়া গ্রাম সংলগ্ন মন্দিরটি। পশ্চিম বর্ধমান ও পুরুলিয়া জেলার সীমান্তবর্তী দামোদরের চরের এই এলাকা আগে ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল। ১৯৮৪ সালে সাকতোরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক লাল আচার্য স্বয়ং মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে ও তাঁর আদেশ পেয়ে দেবী ছিন্নমস্তার মূর্তি ও মন্দির স্থাপন করেন। তিনি নিজেই জঙ্গল কেটে মাটির মন্দির গড়ে মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপূজা শুরু করেন। তবে বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর পুজো করতে পারেন না। পরিবারের লোকজনেরাই সামলান নিত্য পুজোর বিষয়টি।

অন্যদিকে বর্তমানে বদলে গেছে সেই মন্দিরের রূপ। মাটির মন্দিরের জায়গায় গড়ে উঠেছে সুসজ্জিত মন্দির। নিত্যপূজার পাশাপাশি মাঘ মাসে ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয় বাৎসরিক অনুষ্ঠান। এই বার্ষিক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বসে মেলা। ওই দিন জেলা তো বটেই এমনকি পাশ্ববর্তী জেলা ও রাজ্য থেকেও ছুটে আসেন পুণ্যার্থীরা।

মন্দিরের পুরোহিত কিশোর আচার্য জানান মা এখানে জাগ্রত। কালীপুজোর দিন, কার্তিক অমবস্যার নিত্যপূজার পাশাপাশি রাতে হয় বিশেষ পুজো। তবে এখানে বলির প্রচলন নেই। এদিনও দূর দূর থেকে ভক্তেরা ছুটে আসেন মায়ের টানে। উপবাস থেকে মায়ের পুজো দেন, অঞ্জলি দেন। ভক্তদের দাবি মা এখানে সকলের মনোস্কামনা পূরণ করেন। কাউকে খালি হাতে ফেরান না। বর্তমানে মা ছিন্নমস্তার এই মন্দির ভক্তদের কাছে তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments