eaibanglai
Homeএই বাংলায়গুসকরা সুকান্ত পল্লীতে পরিবেশিত হলো নাটক

গুসকরা সুকান্ত পল্লীতে পরিবেশিত হলো নাটক

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- একটা সময় গ্রাম বাংলার যেকোনো সামাজিক উৎসবে বিনোদনের অন্যতম অঙ্গ ছিল নাটক, যাত্রা সহ নৃত্য, সঙ্গীত সমৃদ্ধ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর্থিক সমস্যা, সামাজিক জটিলতা এবং সর্বোপরি তরুণ সমাজের অনীহার কারণে নাটক নামক বিনোদনের মাধ্যমটির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে।

তারপরও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একদল নাট্যপাগল মানুষ আছেন যাদের সৌজন্যে আজও নাট্যপ্রেমী মানুষ নাটকের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ পান। গত ১৭ ই নভেম্বর গুসকরা সুকান্ত পল্লীর (৪ নং ওয়ার্ড) সৌজন্যে সেই সুযোগ পেল কয়েকশ’ নাট্যপ্রেমী মানুষ। তাদের উপস্থিতিতে পরিবেশিত হয় বিখ্যাত নাট্যকার মনোজ মিত্র রচিত ‘সাজানো বাগান’।

নাট্যশিল্পের মর্যাদা পুরোপুরি বজায় রেখে যে কয়েকজন নাট্যকার অনায়াস দক্ষতায় বাংলা নাটকে সরাসরি শোষিত মানুষের পক্ষ নিয়ে শোষক শ্রেণির মুখোশ ছেঁড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের অন্যতম হলেন মনোজ মিত্র। তাঁর একাধিক নাটকে এই প্রবণতা বারবার দেখা গেছে। ‘সাজানো বাগান’ নাটকটিও ব্যতিক্রম নয়।

নাটকে সাজানো বাগানের অধিকার নিয়ে ভূমিজ প্রান্তিক মানুষ বাঞ্ছা-কাপালিদের সঙ্গে ভূমিগ্রাসী ছকড়ি- নকড়ির লড়াই স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। নাটকে দেখা গেছে জমিদার ছ’কড়ি মরেও বাঞ্ছার বাগানের প্রতি লোভ ছাড়তে পারেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় হয় বাঞ্ছাদের। তারা শোষক শ্রেণির অন্যায় অত্যাচার থেকে বেরিয়ে জীবনের মুক্ত পটভূমিতে এসে দাঁড়ায়। তাদের প্রতিবাদের কাছে হার মেনে ছ’কড়ির ভূত অদৃশ্য হয়। আতঙ্কে মারা যায় শোষক ন’কড়ি।

এই নাটকে বিভিন্ন সমস্যা যেমন সরাসরি বা রূপকের আড়ালে আছে, তেমনি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও সরস কৌতুক মিশিয়ে তার থেকে পরিত্রাণের ইঙ্গিতও আছে।

নাট্যকারের বিমূর্ত ভাবনা তখনই মূর্ত হয়ে ওঠে যখন নাটকের চরিত্ররা সেগুলির বাস্তব রূপ দিতে সমর্থ হয়। এখানেই কৃতিত্ব দাবি করতে পারে অপূর্ব চক্রবর্তী, বাদল রায়, ইন্দ্রজিৎ দাস, শঙ্করী রায়, দিয়া চক্রবর্তী, বিমল হালদার, বিয়াস রায়, রতন বৈরাগ্য, শুভদীপ দাস, দেবাশীষ মণ্ডল, সমীরণ রায়, গোপাল মির্দ্ধা সহ প্রত্যেক অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা। নিজ নিজ ভূমিকায় তাদের যথাযথ রূপদান দর্শকদের মুগ্ধ করে।

নাটকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মঞ্চসজ্জা। নাটকের প্রয়োজনে বাদল রায়ের মঞ্চসজ্জা দেখে যেকোনো পেশাদার শিল্পী লজ্জা পেতে পারেন। নাটকে শব্দ ও আলো প্রক্ষেপণে শিশির ঘোষ ও সংলাপ স্মরণে সৌইনা মুখার্জ্জী যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বাঙ্গীন ভাবনা ও নাটক পরিচালনায় অপূর্ব চক্রবর্তী সত্যিই অপূর্ব ছিলেন।

নাটকটি মঞ্চস্থ করতে বিশেষ সহযোগিতা করেন বুর্ধেন্দু রায়, দেবজ্যোতি রায়, বিজয়া রায়, জেসমিন সুলতানা, প্রভাত মালিক, দুলাল হালদার, বাবলু চক্রবর্তী প্রমুখ।

নাটকটি উপভোগ করার জন্য উপস্থিত ছিলেন নাট্যজগতের পরিচিত মুখ সুবীর রাণা। তার ছোট্ট প্রতিক্রিয়া – অপূর্ব চক্রবর্তী ও তার টিমের দৌলতে সত্যিই এক অপূর্ব নাটক উপভোগ করার সুযোগ পেলাম। মাথায় রাখতে হবে প্রচলিত ভাবনার সঙ্গে এই নাটকের ভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা। এরজন্য নাটকের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই কৃতিত্বের দাবি রাখতে পারে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments