eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুরের মানাচর অবৈধ পোস্ত চাষের স্বর্গরাজ্যঃ প্রশ্নের মুখে প্রাক্তন বিধায়ক আর পুরপিতার...

দুর্গাপুরের মানাচর অবৈধ পোস্ত চাষের স্বর্গরাজ্যঃ প্রশ্নের মুখে প্রাক্তন বিধায়ক আর পুরপিতার ভূমিকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- শিল্পাঞ্চলের ‘লাইফলাইন’ দামোদর নদের বুকে গজিয়ে ওঠা মানা চর বরাবরই বাঁকুড়া-পশ্চিম বর্ধমানের কিছু অন্ধকার জগতের লোকজনের ঢালাও বেআইনি পোস্ত চাষের স্বর্গরাজ্য। আর এবার প্রশাসনিক পদক্ষেপে কয়েক’শ বিঘা নিষিদ্ধ নেশার দ্রব্য ধ্বংসের সময় প্রকাশ্যে এল আরো অনেক বেশি চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা নিয়ে প্রশাসনিক তো বটেই, হৈচৈ পড়েগেল এ জেলার রাজনৈতিক মহলেও।

বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানের আলাদা আলাদা দুটি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বেআইনি এই বেপরোয়া পোস্ত চাষের নেপথ্য কারিগর আসলে দুর্গাপুরের এক প্রাক্তন বিধায়ক আর শহরের এক প্রাক্তন পুরপিতা। গতবছরই আকাশে ড্রোন উড়িয়ে ম্যাপিং করে দক্ষযজ্ঞ করে নির্বিচারে অবৈধ পোস্ত চাষ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাঁকুড়ার এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। কিন্তু, এবছরেও সেই একই এলাকায় ফের পোস্তর চাষ কয়েক মাস ধরে শুরু হলেও, এক অজ্ঞাত কারণে চলতি বছর বিষয়টিতে জেলার প্রশাসনিক ওপরতলার নজরদারি স্থগিত রাখা হয়। স্থানীয়রা জানান, ‘আসলে কিন্তু কয়েক হাজার একর জমিতে চলছে এই অবৈধ পোস্ত চাষের রমরমা ব্যবসা। ওনারা আজ নষ্ট করলেন তার এক চতুর্থাংশ মাত্র। কেন, কে জানে?’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীরা বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার সীমানা বরাবর এই অবৈধ পোস্ত চাষ করে অন্ততঃ আশি কোটি টাকা রোজগার করেছে গত দুবছরে, আর তাদের চলতি বছরের ফসল মূল্য অন্ততঃ আরো পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা। সময়ে সময়ে, পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়া পুলিশ বারবার যৌথ অভিযান চালালেও ধরা যায়নি এই অবৈধ পোস্ত চাষের নেপথ্যে মাখন খাওয়া মুখোশধারী আসল কারবারিদের। একটি সূত্র জানিয়েছে, দুদিন আগেই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর কাছে রাজ্যের মুখ্য প্রশাসনিক মহল থেকে দামোদর নদের মানা চর এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে এই অবৈধ পোস্ত চাষের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আসে। সেই মোতাবেকই অবশেষে অভিযান চালিয়ে আধিকারিকেরা নষ্ট করে দিয়েছেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ এই পোস্ত চাষ। কিন্তু, প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে দুষ্কৃতিকারীরা বারবারই এক শ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের একাংশের যোগাযোগে নতুন করে সরকারি অধিকৃত খাস জমির উপর কোন যাদুমণ্ত্রে নতুন করে পোস্ত চাষ শুরু করে দিচ্ছে, তা নিয়ে ধন্দ কাটছেনা কিছুতেই।

দুর্গাপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের ডাইরেক্টর জেনারেল, পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়ার জেলার জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, সুপারেনটেনডেন্ট অফ পুলিশ সহ একাধিক ব্যক্তিকে এই মর্মে লিখিত অভিযোগও জানানো হয় । এই অভিযোগ পাওয়ার পরেই বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন ও নারকোটিকস কন্ট্রোল বিউরো আধিকারিকরা তৎপরতার সাথে দামোদর নদ বরাবর মানা চরে হানা দিয়ে বহু পোস্ত গাছ নষ্ট করে দিয়েছেন গতকাল ও আজকে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে যারা বুক ফুলিয়ে অবৈধভাবে পোস্ত চাষ করছে এ জেলা ও বাঁকুড়ার কিছু থানার আধিকারিকদের মদতে। ওই সংগঠনের অভিযোগ পত্র থেকে জানা গেছে, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি, লোহা মাফিয়া ও অপরাধীদের এক সিন্ডিকেট এই ব্যবসা চালিয়ে আসছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বসেই, বিনা বাধায়, নির্ভয়ে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য প্রশাসনের কাছে যে নামগুলি দেওয়া হয়েছে অবৈধ পোস্ত চাষের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের তারা হলেন দুর্গাপুরের কোক ওভেন থানা, ওয়ারিয়া পুলিশ ফাঁড়ি ও ডিটিপিএস পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় বসবাসকারী জনৈক বুকুন , জনৈক সন্তোষ, জনৈক সরভান, আমিরচান্দ,এক পরেশ, জনৈক ইমরান এবং জনৈক শেষনাগ, সুনীল, শত্রুঘণ, রমেশ, লালচাঁদ, লোকনাথ। এরা সকলেই দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এদের প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ভূমিকাও প্রশ্নের উরধে নয়।

এর আগে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ আধিকারিকরা ডিটিপিএস পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে কয়েক বস্তা পোস্তর খোল যা আফিম তৈরি করার উদ্দেশ্যে জড়ো করা হয়েছিল, তা একটি ডাম্পারের ভেতর থেকে উদ্ধার করেছিলেন। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক জানান “প্রতিবছর দামোদর নদের চর বরাবর কয়েক কোটি টাকার অবৈধ পোস্ত চাষ হয়। এবং এই পোস্ত চাষে সরাসরি মদত দেন বেশ কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা ও কয়েকজন পদস্থ পুলিশ কর্মী। এদের সরাসরি যোগ সাজসসে এই ব্যবসা চলে। এই ব্যবসার ফলে প্রত্যেক বছর কয়েক কোটি টাকার মাদক তৈরির সরঞ্জাম এই দামোদর নদের চর থেকে পাচার হয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে। অবিলম্বে এই অবৈধ পোস্ত চাষ বন্ধ করা না গেলে, আদূর ভবিষ্যতে আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার প্রত্যেকটি পান গুমটিতেই পাওয়া যাবে মাদকদ্রব্য। তাই, সময় থাকতে এখনই সচেষ্ট হতে হবে রাজ্য প্রশাসন ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল বিউরো আধিকারিকদের এই দুষ্কৃতিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে ও চিহ্নিত করে যথাযথ সাজা দিয়ে এই ব্যবসার সমূলে বিনাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments