eaibanglai
Homeএই বাংলায়দামোদরের পোস্ত কাণ্ডে তুঙ্গে তরজাঃ লক্ষণ বললেন পারিয়াল আফিম চাষী, বিশ্বনাথ বললেন...

দামোদরের পোস্ত কাণ্ডে তুঙ্গে তরজাঃ লক্ষণ বললেন পারিয়াল আফিম চাষী, বিশ্বনাথ বললেন লক্ষণই চোর

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- লাগাতার আবগারি আর পুলিশি অভিযানে এবার আফিমের নেশা ছুটেছে মাদক কারবারীদের। জোর চাঞ্চল্য দুর্গাপুরের রাজনৈতিক মহলেও। কারণ, যৌথ তদন্তে ইতিমধ্যেই বেআইনি মাদক কারবারিদের সাথে শিল্পাঞ্চলের কিছু রাজনৈতিক নেতার যোগের ইঙ্গিত যেমন মিলেছে, তেমনি আবার এক প্রাক্তন বিধায়কের বিরুদ্ধে অবৈধ পোস্ত চাষে জড়িত থাকার সরাসরি অভিযোগ এনেছেন শহর দুর্গাপুরের এক বর্তমান বিধায়ক। সব মিলিয়ে বাঙালির পাতের নিরীহ পোস্তর লুকানো ঝাঁজ এবার হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে দুর্গাপুর জুড়েই।

দামোদর নদের বুকে ইতি উতি গজিয়ে ওঠা কয়েকটি মানাচরই অবৈধ পোস্ত চাষের আসল স্বর্গরাজ্য। আর, তা চলছে বিগত প্রায় আড়াই দশক ধরে। এই পোস্ত চাষের সাথে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে এলাকার বেশ কিছু লোহা আর বালি মাফিয়া, বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এরই পাশাপাশি সামনে এসেছে বেশ কিছু নামজাদা রাজনৈতিক নেতার পোস্ত-আফিমের বেআইনি কারবারে জড়িয়ে পড়ার কথা। গত ছয় দিন ধরে বাঁকুড়া জেলার আবগারি বিভাগ এবং জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়েছে ২১ লক্ষ ৬০ হাজার পোস্ত গাছ। এগুলি সবই মেজিয়া থানার জালানপুর ও জংপুর মৌজার অন্তর্গত। এইসব গ্রামগুলি পড়ে বাঁকুড়ার বানজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে, বলে জানান মেজিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ কৌশিক হাজরা। তিনি আরো বলেন, “আমাদের এই পোস্ত-আফিম চাষ বন্ধের অভিযান ততদিনই চলবে যতদিন দামোদর নদের চরের বুকে পোস্ত-আফিম চারা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে।” তবে, তার কথায়, “দামোদর নদের জল ভেঙ্গে বার বার ভৌগোলিকগত ভাবে দুর্গম ওইসব জায়গায় অভিযান চালানোটা একটু সমস্যার ব্যাপার বৈকি!” বাঁকুড়া জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, “শুধু পোস্ত-আফিম গাছ ধ্বংস করাই নয়, পুলিশ এখন উঠে পড়ে লেগেছে এই চাষের সাথে সরাসরি জড়িত যে সব মাফিয়া, ব্যবসায়ী বা রাজনৈতিক নেতা ও লোকজন তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। ছাড়া হবে না কাউকেই।” বিষয়টিতে অভিযান ও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রায় দিনই নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের কাছে রিপোর্টও পাঠানো হচ্ছে বলে পুলিশের একটি পদস্থ সূত্র জানিয়েছে।

এরই মাঝে অবৈধ পোস্ত-আফিম কাণ্ডে জড়িয়ে পড়া রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে দারুণ চাঞ্চল্য শহর দুর্গাপুরে। কারণ, বাঁকুড়া পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, অবৈধ পোস্ত-আফিম কারবারীরা প্রায় সকলেই দুর্গাপুর, অন্ডালের বাসিন্দা আর তারা সকলেই হয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পোস্ত চাষে হয় যুক্ত নয়তো বা মদতদাতা। এদের নেপথ্যে রানিগেঞ্জর কিছু অর্থ লগ্নিকারীর কথাও তদন্তে উঠে আসছে। দুর্গাপুরের এক প্রাক্তন পুরপিতার নামের পাশাপাশি জড়িয়ে যায় প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালেরও নাম। বিষয়টি রাজনৈতিক গুরুত্ব পেয়েছে বিশেষ করে দুর্গাপুর (পশ্চিম)’র বর্তমান বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই সরাসরি পাড়িয়ালের নাম ধরে দাবি করেন, “কলকারখানায় তোলাবাজি পর্ব শেষ করে উনি এখন দামোদরের মানাচরে বালি খাদান, পোস্ত চাষে ব্যস্ত। দুর্গাপুরের সকলেই জানে উনি মানাচরে রাতের অন্ধকারে কি করেন, কেনই বা ওখানে পড়ে থাকেন ?” লক্ষণের আরো দাবি, “আজ বিধানসভা শুরু হল। সুযোগ বুঝে ব্যাপারটা বিধানসভায় তুলবো । এদের কাউন্সিলার, এম.এল.এ সবাই জড়িয়ে পোস্ত চাষে। আমি পুলিশকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু নেয়নি।”

দীর্ঘদিনের বাম জামানার লড়াকু তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়াল হরেক রকম দল বদলে ফের তৃণমূলেই প্রত্যাবর্তনের আগে ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অপূর্ব মুখার্জিকে পরাজিত করে বাম সমর্থনে বিধায়ক হন। এলাকায় তার প্রতিচ্ছবি একজন লড়াকু নেতা হিসেবেই। খোদ তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আবেদনে সাড়া না দিয়ে দুর্গাপুরবাসী বিশ্বনাথকেই জিতিয়েছিল তার প্রতিবাদী চরিত্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে। সেই বিশ্বনাথই আবার ২০২১’র বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে কিন্তু হেরে যান এই লক্ষণেরই কাছে। তারপর থেকেই তার জনপ্রিয়তায় ক্রমে ভাঁটা পড়তে শুরু করে। এখন আবার বর্তমান বিধায়ক লক্ষণ তাকে অবৈধ পোস্তচাষী বলায় বিষয়টির রাজনৈতিক গুরুত্ব অন্য মাত্রা ছুঁয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা এহেন গুরুতর অভিযোগে রীতিমতো গর্জে ওঠেন বিশ্বনাথ। তিনি বলেন, “আমিতো বিধায়ক ছিলাম পাঁচটা বছর। কিন্তু, ২৫ বছর ধরে দামোদরের মানাচরে অবৈধ পোস্ত চাষ হয়। বিধায়ক থাকার সময় বারে বারে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছিলাম। আর আজকে উল্টো আমাকেই কিনা পোস্তচাষী বানাতে চাইছে?” প্রাক্তন বিধায়ক আরো বলেন, “ওই লক্ষণের নিজের দলের লোকেরাই তো ওকে চোর বলে। ওর ছেলের বি.এম.ডাব্লু গাড়ি কোথা থেকে এল?” গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে দাবি করে বিশ্বনাথ বলেন, “আরে ওদেরই হাতে তো ই.ডি বা সি.বি.আই আছে। যেখানে সেখানে যখন তখন লেলিয়ে দিচ্ছে। পারলে ই.ডি বা সি.বি.আই আমার পোস্ত চাষ নিয়ে তদন্ত করুক। ধরুক আমাকে। আমি দোষী হলে, কাউকে কিছু বলতে হবে না, নিজেই ঢুকে যাব জেলখানায়।”

এদিকে, পোস্ত চাষ নিয়ে রাজনৈতিক তরজার পাশাপাশি বুধবারেও মানাচরের নতুন কিছু এলাকায় জিও- ম্যাপিং প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অভিযান চালায় বাঁকুড়ার মেজিয়া থানার পুলিশ ও আফগারি দপ্তর। এই মেজিয়া থানারই কিছু পুলিশ অফিসারকে নাকি মোটা অঙ্কের ভেঁট দিয়ে বশ্ করতে উদ্যত হয়েছিল দুর্গাপুরের মায়াবাজার এলাকার দুই অবৈধ পোস্ত-আফিম মাফিয়া ইমরান ও সন্তোষ, বলে অভিযোগ। তাদের পোস্ত চাষ রয়েছে মানাচরের ২০০ বিঘা খাস জমিতে। দামোদর নদের মানাচরে তাদের চাষের গাছ থেকে আফিমও মিলছে, বলে আভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানিয়েছে। ওই সূত্রটির দাবি – আর দশ দিন হলেই খোলা ছাড়িয়ে রূপালী পোস্তর ফসল উঠবে অবৈধ চাষীদের ঘরে। তার আগে পুলিশি অভিযানে ‘পাকা ধানে মই’ পড়ার আশঙ্কায় একটি ধূসর রং এর মারুতি ব্যালেনো গাড়ি নিয়ে চার দিন আগে তারা নাকি পৌঁছে যায় সোজা মেজিয়ায়। তবে, কড়াধাতের অফিসারদের কাছে তারা বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি বলেই জানা যায়। পুলিশ জানায় “ওদের চাষ আর বাস- দুটোরই খোঁজ হচ্ছে। কতদিন পালিয়ে বাঁচতে পারবে ?”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments