eaibanglai
Homeএই বাংলায়পঞ্চায়েত নির্বাচন - শুভেন্দু কি আরও দিশাহারা!

পঞ্চায়েত নির্বাচন – শুভেন্দু কি আরও দিশাহারা!

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- আপাতত ঠিক আছে ১১ ই জুলাই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হবে। সম্ভাব্য ফলাফল ও নিজের ব্যর্থতার কথা ভেবে শুভেন্দু অধিকারী কি আরও দিশাহারা! বিভ্রান্ত! বর্তমানে তার বিভিন্ন মন্তব্য ও কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে তিনি যেন মাঝ সমুদ্রে ভেসে থাকা কম্পাসহীন এক নাবিক। এই মুহূর্তে উচিত-অনুচিত ঠিক করতে পারছেন না।

তৃণমূলে থাকাকালীন মন্ত্রী ও সংগঠক হিসাবে শুভেন্দুর তৃণমূলে তার গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট। ‘সারদা’, ‘নারদা’ কেলেঙ্কারি সামনে এলে অন্য তৃণমূল নেতাদের মত গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় সে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেয়। অভিষেক ফ্যাক্টরও তার মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল।

শুভেন্দুকে দলে পেয়ে তার হাত ধরে বিজেপি রাজ্য দখলের স্বপ্ন দেখতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, একদল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ বিজেপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এই রাজ্যে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়লেও স্বপ্ন পূরণ হয়না। ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল ক্ষমতা দখল তো দূরের কথা তিন অঙ্কের আসন পর্যন্ত বিজেপি দখল করতে পারেনি। বিজেপির বোঝা উচিত ছিল শুভেন্দু আর যাইহোক মমতা নয়।

নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসাবে মমতা নিজের নাম ঘোষণা করলে হতাশ শুভেন্দু বলতে থাকে – মমতা নাকি শেষপর্যন্ত ওখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেনা, তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়ার জন্য নাকি এই পদক্ষেপ। ইত্যাদি। যতদিন গেছে হতাশাটা ধীরে ধীরে বেড়ে গেছে।

ভোটের ফল ঘোষণার পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একদল তৃণমূল দুষ্কৃতি বিজেপির কর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রান্ত কর্মীদের পাশে না দাঁড়িয়ে শুভেন্দু নিরাপদ আশ্রয়ে বসে থাকে। অথচ ভোট প্রচারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে একের পর এক উস্কানিমূলক কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করে গেছে। স্বপ্নভঙ্গের মধ্যে দিয়ে তার মধ্যে জন্ম নেয় নতুন হতাশার।

রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি নিয়ে শুভেন্দু বারবার ছুটে গেছে দিল্লিতে। পাশে পেয়ে যায় তৎকালীন রাজ্যপালকে। বারবার দিল্লি যাত্রা করে লাভ হয়নি। আবার হতাশা!

বিধানসভা ভোটের পরও সংগঠন গড়ার দিকে নজর না দিয়ে শুভেন্দু দিল্লির মুখ চেয়ে বসে রইল। রাজ্যের পাঁচটা পুরনিগম সহ শতাধিক পুরসভার নির্বাচনে বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ে। শূন্য আসন পাওয়া বামফ্রন্ট একটা পুরসভা দখল করতে পারলেও বিজেপির ভাঁড়ার শূন্য। এর থেকে লজ্জার কিছু আছে!

শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই ও ইডি – জোড়া তদন্ত শুরু হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী সহ শিক্ষা দপ্তরের একাধিক আধিকারিক এবং তৃণমূলের কয়েকজন বিধায়ক ও পদাধিকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। তারপরও তার দাবি – ‘মাথা’ চায়। প্রমাণ ছাড়া আগে থেকে মাইণ্ড সেট করে রাখা ‘মাথা’র দাবি তুলতে গিয়ে ফল না পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি হতাশ শুভেন্দু!

তার হতাশা এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গ্যাছে যে হঠাৎ সে দাবি করে বসল জাতীয় দলের তকমা বজায় রাখতে মমতা নাকি অমিত শাহকে ফোন করেছেন এবং তার প্রমাণ সে দেবে। মমতা চ্যালেঞ্জ করতেই ভুলভাল বকা।

কার্যত ২০২১ সাল থেকেই অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা তিনি বলে চলেছেন। তারিখের পর তারিখ দিয়ে গেছেন। একটাও মেলেনি। এরপর সাধারণ মানুষ ও দলের কর্মীদের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে?

পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের সাফল্যের জন্য অভিষেক জনসংযোগ যাত্রা শুরু করে। সেটা না করে শুভেন্দু চরম হতাশায় কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন অভিষেকের দিকে। সংগঠন গড়ার চেষ্টা না করে মিডিয়ার ফুটেজ খাওয়ার চেষ্টা করলেন। হতাশা!

প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের নতুন প্রজন্মের একদল নেতা-নেত্রী রাজ্যজুড়ে প্রচার করছে। ওদিকে শুভেন্দু ব্যস্ত আদালত নিয়ে। দলের শীর্ষ নেতার আচরণ বিজেপির নীচু তলার কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা এনে দিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের ফল বের হওয়ার পর সেই হতাশা আরও বাড়বে।

দলের কর্মীদের মত শুভেন্দুও জানে পঞ্চায়েত ভোটে দল ভাল ফল করবেনা। ঘরে-বাইরে সব মিলিয়ে শুভেন্দুর খুব একটা ভাল যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা। তার বিভিন্ন মন্তব্যের মধ্যে সেটাই বারবার ফুটে উঠছে। পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির ফল ভাল হবেনা – এটা একপ্রকার নিশ্চিত। ফলে শুভেন্দুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। হয়তো তখন মিডিয়ার হেডিং অন্যরকম হতে পারে – ‘দিদির দুয়ারে’ শুভেন্দু!তার হতাশা আরও বাড়বে। এই মুহূর্তে সে এতটাই হতাশ যে সাধারণ জ্ঞানটুকু হারিয়ে ফেলেছে। নাহলে কেউ বলে – একশ দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছি, এবার মিড ডে মিলের টাকা বন্ধ করে দেব। একটায় গরীব মানুষের পেটে এবং অন্যটায় বাচ্চাদের পেটে লাথ মারার চেষ্টা। অপরাধ যদি তৃণমূল নেতারা করে থাকে তাদের শাস্তি হোক। কেউই আপত্তি করবেনা। কিন্তু ওদের টার্গেট করা কেন? হতাশার বহিঃপ্রকাশ!

ঘরে-বাইরে সব মিলিয়ে শুভেন্দুর খুব একটা ভাল যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা। তার বিভিন্ন মন্তব্যের মধ্যে সেটাই বারবার ফুটে উঠছে। পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির ফল ভাল হবেনা – এটা একপ্রকার নিশ্চিত। ফলে শুভেন্দুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। হয়তো তখন মিডিয়ার হেডিং অন্যরকম হতে পারে – ‘দিদির দুয়ারে’ শুভেন্দু!

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments