eaibanglai
Homeএই বাংলায়রক্তদান শিবিরের আয়োজন করল আউসগ্রাম থানার পুলিশ

রক্তদান শিবিরের আয়োজন করল আউসগ্রাম থানার পুলিশ

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- শাসক বদলায় কিন্তু পুলিশ বাহিনীর দিকে ছুড়ে দেওয়া বিশেষণগুলো বদলায় না। স্বার্থের হানি হলেই কেউ বলে দলদাস, কেউ বলে চটিচাটা। পরবর্তীকালে হয়তো নতুন কোনো শব্দ বন্ধনী আসবে। যাদের পরিচয় ছিল, এখনো আছে, আইনের রক্ষক তারা যে কখন সত্যিকারের সমাজ সেবক হয়ে উঠেছেন সেটা টের পাওয়া যায়নি। অথচ নীরবে নিজেদের দায়িত্ব তারা পালন করে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা জনিত লকডাউনের সময় তাদের ভূমিকা ছিল খুবই প্রশংসনীয়।

অন্যদিকে আছে ‘ইচ্ছে ডানা’ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। সীমাহীন নীল আকাশে তারা তাদের ডানা ইচ্ছেমত মেলে দিয়ে নীল দিগন্তে হারিয়ে যায়নি। সেবার ইচ্ছে নিয়ে বারবার তারা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রশস্ত ডানা বিস্তার করে মানুষকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে। সেই দৃশ্যের সাক্ষী এলাকার মানুষ থেকেছে।

গ্রীষ্মকাল এলেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দ্যাখা দেয় রক্তের সংকট। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে গেলেই একটাই উত্তর – রক্ত নাই। রক্তের সংকট মেটাতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত হয় ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান’ শিবিরের। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় রাজ্যের বিভিন্ন থানায় থানায় আয়োজিত হয় মুখ্যমন্ত্রীর আর এক স্বপ্নের প্রকল্প ‘উৎসর্গ’ এর অধীনে রক্তদান শিবিরের।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম থানার উদ্যোগে থানা চত্বরে আয়োজিত হয় এক রক্তদান শিবিরের। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ইচ্ছে ডানা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। রক্ত সংগ্রহ করতে এগিয়ে আসে বোলপুর মহাকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখা। সবার সহযোগিতায় শিবির থেকে প্রায় সত্তর ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদাতা হিসাবে মূলত পুলিশ ও সিভিক ভলাণ্টিয়ারদের নাম থাকলেও বেশ কয়েকজন উৎসাহী রক্তদাতা রক্তদান করেন। তাদের বক্তব্য – এখানে না এসে থাকতে পারলাম না। তাছাড়া রক্তটা উনারা বাড়ি নিয়ে চলে যাবেন না। আমাদেরই কাজে লাগবে। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি (ডি এণ্ড টি) বীরেন্দ্র কুমার পাঠক, গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি নীতু সিং, ছোড়া ফাঁড়ির ওসি পঙ্কজ কুমার নস্কর এবং আউসগ্রাম থানার আইসি আব্দুর রব খান সহ সমস্ত পুলিশ আধিকারিক। ‘ইচ্ছে ডানা’-র পক্ষ থেকে ছিল সম্পাদক অনুপম রায় সহ বেশ কয়েকজন সদস্য এবং বাচ্চা মেয়ে অনুস্মিতা যাকে ইচ্ছে ডানার প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে দ্যাখা যায়।

থানার অনুষ্ঠান হলেও সেখানে আয়োজনের কোনো ত্রুটি ছিলনা। মেজবাবু সহ প্রতিটি অফিসার বারবার রক্তদাতাদের মাথার কাছে দাঁড়িয়েছেন। অনেক সময় রক্তদাতাদের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। সেই মুহূর্তে পদের কোনো পার্থক্য বোঝা যায়নি। সবার একটাই লক্ষ্য শিবিরকে সফল করা। মেজবাবুর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার মত সব দিক সামলেছেন। আইসি ও ডিএসপি সাহেবও রক্তদাতাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের উৎসাহ দিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ইচ্ছে ডানার সদস্যরা। তবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাচ্চা মেয়ে অনুস্মিতা। মায়ের সঙ্গে সে যখন রক্তদাতাদের মাথার কাছে দাঁড়ায় তখন রক্তদাতাদের মধ্যে আলাদা উৎসাহ দ্যাখা যায়।

রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বড় ভাল কথা বলেন আইসি সাহেব। তিনি বলেন – থানা আর কতটুকু রক্ত সংগ্রহ করতে পারবে। এগিয়ে আসতে হবে সমস্ত সামাজিক সংগঠনগুলিকে। থানা তাদের সমস্ত রকমের সহযোগিতা করবে।

সাধারণ মানুষের মনে জমে থাকা সংশয় ও ভুল ধারণা দূর করে নীতু দেবী বলেন – তাদের কাছে কিছু ডোনার কার্ড থাকে। প্রয়োজনে হলে অবশ্যই সেই কার্ড মুমূর্ষু রুগীর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সুতরাং আপনার দান করা রক্ত নষ্ট হবেনা।

অন্যদিকে পঙ্কজ বাবু ‘উৎসর্গ’ শব্দটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে প্রত্যেককে এই মহতী কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসপি বলেন – তাদের লক্ষ্য নিজ নিজ এলাকায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য স্থানীয় ক্লাবগুলোকে উৎসাহিত করা।

কঠোর পরিশ্রমের পর যেভাবে পুলিশকর্মীরা রক্ত দিতে এগিয়ে এসেছে তাতে সাধারণ মানুষ খুব খুশি। কথা প্রসঙ্গে অনেকেই আগামী দিনে এই ধরনের শিবিরে রক্তদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments