eaibanglai
Homeএই বাংলায়মঙ্গলকোটের সালন্দার দুর্গা আসলে মা কালী

মঙ্গলকোটের সালন্দার দুর্গা আসলে মা কালী

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোটঃ- স্থানীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী কোথাও ‘মা’ এসেছেন কুমারী মেয়ের ছদ্মবেশে, কোথাও বা অন্য কোনো রূপ ধরে। কিন্তু পশ্চিম মঙ্গলকোটের সালন্দার রায় বাড়ির মায়ের প্রকৃত রূপ হলো ‘মা’ কালী। পরে ঠাকুরের স্বপ্নাদেশ পেয়ে ‘মা’ কালী এখানে গত প্রায় দশ পুরুষ ধরে ‘মা’ দুর্গা রূপে পুজিতা হয়ে আসছেন। এসব প্রায় ৪৫০ বছর আগের ঘটনা। তবে যে রূপেই মা এসে থাকুন জমিদার বাড়ির আভিজাত্য না থাকলেও পুজোর সময় ভক্তির কোনো অভাব নাই।

শোনা যায় জমিদার মোহন রায়ের মা গর্ভাবস্থায় নিজেদের বসত ভিটে মঙ্গলকোটের সিঙ্গট থেকে সালন্দায় চলে আসেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন কালী মায়ের। সঙ্গে পঞ্চমুণ্ডীর আসন। সেখানেই শুরু হয় কালী পুজো। পরের ঘটনা মোটামুটি রায় বাড়ি সহ গ্রামের সবার জানা।

শুরু থেকেই মা এখানে সপরিবারে এক পাটাতনেই আসেন। জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য মেনে ধুমধাম সহকারে পুজো শুরু হয়। সপ্তমীর দিন যখন ঘট আনতে যাওয়া হয় তখন গোটা গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মেয়ে-বৌ সহ অন্যান্যরা সেই শোভাযাত্রায় পা মেলায়। আগে এখানে মোষ বলি হতো। এখনো মোষ বলির রক্ত যাবার ড্রেনের অস্তিত্ব দ্যাখা যায়। এখন আর মোষ বলি হয়না। তবে অতীত ঐতিহ্য মেনে অষ্টমী ও নবমী তিথিতে ছাগ বলি হয়। দশমীর দিন সন্ধ্যায় ঠাকুর বরণ করার সময় গ্রামের প্রত্যেকেই মেতে ওঠে সিঁদুর খেলায়। পুজোর সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তাতে গ্রামের ছেলেমেয়েরাই অংশগ্রহণ করে। আসলে গ্রামে একটাই পুজো। ফলে পুজোর আনন্দটা অন্যরকম হয়। তবে সবকিছুকেই অতিক্রম করে এখানকার পুজো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন হয়ে ওঠে।

জমিদার বাড়ি হলেও ঠাকুরের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নাই। ফলে রায় বাড়ির সদস্যরাই সমস্ত খরচ বহন করে। তবে সরকারের কাছ থেকে সামান্য রাজস্ব পাওয়া যায়।

কালের নিয়মে এক সময় জমিদারদের তৈরি করা মন্দির চত্বর জীর্ণ হয়ে পড়ে। সেটি সংস্কার করার মত আর্থিক সামর্থ্য পরিবারের সদস্যদের ছিলনা। এটা নিয়ে ওদের একটা আক্ষেপ থেকে গিয়েছিল।বছর পাঁচেক আগে বীরভূমের বাহিরিতে বসবাসরত রায় পরিবারের অন্যতম সদস্য রথীরঞ্জন রায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে মন্দিরটি সংস্কার করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সদস্যরা খুব খুশি।

কর্মসূত্রে বাহিরি, সাঁওতা, সিঙ্গট, চন্দননগর সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রায় বাড়ির সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও পুজোর সময় কিন্তু প্রত্যেকেই গ্রামে ফিরে আসে। তখন কিন্তু রায় বাড়ি সত্যিই জমজমাট হয়ে ওঠে।

পরিবারের অন্যতম সদস্য স্বপন রায় বললেন – আমাদের গ্রামে একটাই দুর্গা পুজো হয়। আক্ষরিক অর্থে সেটা রায় বাড়ির হলেও বাস্তবে গ্রামের প্রতিটি সদস্য পুজোয় অংশগ্রহণ করে। তখন সত্যিই খুব আনন্দ হয়। মনে হয় ‘মা’ সবার।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments